জিয়ার আমলে কত খুন, খুঁজে দেখতে বললেন শেখ হাসিনা

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সারাদেশের কারাগারগুলোতে কত লোককে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তা খুঁজে দেখতে সংসদ সদস্যদের বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2021, 01:09 PM
Updated : 16 Sept 2021, 07:43 PM

বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

দেশে সুশাসন নিয়ে প্রতিনিয়ত বিএনপি নেতাদের সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “এত কথা বলে.. আমি মনে করি আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্যদের একটা উদ্যোগ নেওয়া উচিত। জিয়ার আমলে প্রত্যেকটা কারাগারে কত মানুষকে ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছে।

“একেকটা ক্যু, আর শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আর্মি অফিসার, আর্মি সোলজার, বিমান বাহিনীর ৫৬৫ জন অফিসার এবং সোলজার এবং সব মিলে এই রকম কত মারা হয়েছে।”

“এদের কাছ থেকে মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়! এদের কাছে জ্ঞানের কথা শুনতে হয়! এদের কাছে আইনের শাসনের কথা শুনতে হয়!” বলেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “(জিয়াউর রহমান) ১৯৭৫ এর হত্যার সঙ্গে যে জড়িত, এতে তো কোনো সন্দেহ নেই। আমি তাকে আসামি করতে চেয়েছিলাম। তখন আমাদের হোম সেক্রেটারি ছিলেন রেজাউল হায়াত। সে আবার বলল মৃত মানুষকে তো আসামি করা যায় না। আমার মনে হয় এটা ভুল, নামটা থাকা উচিত ছিল।”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়ার জড়িত থাকার প্রমাণ হিসেবে খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, আব্দুর রশিদের সাক্ষাৎকার, সাংবাদিক এ্যান্থনি মাসকারেনহাস ও লরেন্স লিফশুজের বইয়ের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “তাই যদি না করে, তাহলে স্বাধীনতার পর যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছিল, তাদের ছেড়ে দিল কেন?

“গোলাম আযম তো পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে চলে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান ফেরত নিয়ে আসে।”

জিয়ার শাসনামলে পাকিস্তানিদের দোসরদের মন্ত্রী, উপদেষ্টা করা, জাতির পিতার খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

“আর তার বউ খালেদা জিয়া এসে আরো এক ধাপ উপরে গেল যে কর্নেল রশীদ আর হুদাকে এমপি বানিয়ে পার্লামেন্টে বসাল। এই তো তাদের চরিত্র!”

শেখ হাসিনা বলেন, “হ্যাঁ, আমাদের দলের বেঈমান তো ছিলই। খন্দকার মোশতাক, টোশতাক তো ছিলই। এটা তো অস্বীকার করি না। তারা তো এক সাথেই ছিল।

“আর আমাদের বাড়ির ভাত কার পেটে না গেছে। খালেদা জিয়া.. আর জিয়াউর রহমান তো খালেদা জিয়াকে নিয়ে মাসে একবার করে আমাদের বাসায় গিয়ে বসে থাকত। এখন তো অনেক কিছু হয়ে গেছে।”

জিয়ার আমলের নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ভোট ধ্বংস করার, ভোটের উপর মানুষের আস্থা-বিশ্বাস নষ্ট করা এটা তো জিয়াউর রহমান শুরু করেছে। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ঋণ শোধ না করার কালচার তার শুরু করা। মানুষকে দুর্নীতিবাজ করা, মেধাবী ছাত্রকে এক হাতে পুরস্কার দিয়েছে, আর আরেক হাতে অস্ত্র, অর্থ দিয়ে তাদেরকে বিপথে পাঠিয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি ১৯৮১ সালে ফিরে এসে..রাতে ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরতে হবে। কেন? কারফিউ। কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছে, বহুদলীয় না। আর মদ, জুয়া এগুলো তো করেছেই, বলে লাভ নাই।”

জিয়ার কবর নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়ার মৃত্যু সংবাদের পর তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। গায়েবানা জানাজা হয়েছিল। কয়েকদিন পরে একটা বাক্স আনা হল।

“এখানে কেউ একটা বুদ্ধি দিয়েছে। আর জেনারেল এরশাদ সাহেব আবার এই ব্যাপারে যথেষ্ট পারদর্শী। সাজিয়ে- গুজিয়ে একখানা বাক্স নিয়ে এসে দেখানো হলো। তখন এই সংসদে বার বার প্রশ্ন এসেছে- যদি লাশ পাওয়া যায় তবে লাশের ছবি থাকবে না কেন?”

বিএনপির প্রয়াত নেতা মীর শওকত আলীকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, “সে বলেছিল, লাশ কোথায় পাব।”

প্রয়াত এইচ এম এরশাদও একই কথা বলেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাকে বলেছেন- বোন লাশ পাব কোথায়? আর কী বলব।”

‘কী লিখল আর কী বলল, তা শুনে দেশ চালাই না’

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কে কী বলেছ কিংবা কী লিখেছে, সেই সব সমালোচনায় তাকে দমাতে পারে না।

তিনি বলেন, “ওই যে আছে কিছু লোক তো আছে না যে..যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। তো এই অবস্থায় কিছু লোক ভোগে। আর কিছু একটু হতাশায় এমনিই ভোগে।তো সেটা নিয়ে আমার কোন ইয়ে নেই।

“আর মিডিয়াতে কী লিখল আর টকশোতে কী বলল, আমি কিন্তু ওইটা শুনে এই দেশ পরিচালনা করি না। আমি দেশ পরিচালনা করি আমার অন্তর থেকে। কারণ আমার বাবা এদেশ স্বাধীন করেছেন। এই দরিদ্র মানুষের জন্য বছরের পর বছর তিনি জেল খেটেছেন। নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন।

“সেই মানুষগুলোর জন্য কী কাজ করতে হবে, সেটা আমি শিখেছি আমার বাবার কাছ থেকে, মায়ের কাছ থেকে, আমি সেটাই কাজে লাগাই। কে কী বলল, ওটা শুনে হতাশ হওয়া বা উৎসাহিত হওয়া আমার সাজে না।”

করোনাভাইরাস টিকার বন্দোবস্ত নিয়ে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে ওই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ভ্যাকসিনের কোন সমস্যা আল্লাহর রহমতে নেই। আমরা প্রায় ২৪ কোটির মতো ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। ২৪ কোটি টিকা আমরা ক্রয় করব।

“দেশে যেন ভ্যাকসিন তৈরি হয়, তার জন্য ইতিমধ্যে দেশীয় এবং বিদেশি কোম্পানির মধ্যে চুক্তি হয়ে গেছে। তার বাইরেও আমরা নিজেরা তৈরি করার জন্য ইতিমধ্যে ১০ একর জায়গা নিয়ে ল্যাব তৈরি করা, মলিক্যুলার ল্যাব যেখানে টেস্টিং হবে, সেটার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।”