কারখানা খুললেন, ভাবলেন না শ্রমিকদের আসতে হবে: টুকু

পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতা প্রকট হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2021, 12:09 PM
Updated : 1 August 2021, 12:09 PM

এই কারণে সরকারের দায়িত্বশীলদের পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ‘করোনা পর্যবেক্ষণ সেল’র আহ্বায়ক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ ‍টুকু।

রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছিলেন।

মহামারী মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে আসা বিএনপির নেতা টুকু এবার লকডাউনের মধ্যে শিল্প কারখানা খুলে শ্রমিকদের বিপদে ফেলার সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “উচ্চ পর্যায়ে কমিটি মিটিং করে গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হল। সেই পর্যায়ে সিনিয়র সেক্রেটারি বা সিনিয়র গভর্নমেন্ট অফিসিয়ালসরা আছেন। তাদের মাথায় এটুকু ঢুকলে না যে, আমরা যে খুলে দিচ্ছি এই লোকগুলো কীভাবে আসবে?

“এই যে উদাসীনতা। কারণ মানুষ নিয়ে তারা তো ইন্টারেস্টেড না। তারা ভোট করে ক্ষমতায় আসবে না, ভবিষ্যতে আসবে যে তারও কোনো চিহ্ন নাই। সেজন্য জনগণ ইজ নট ফ্যাক্টর।”

রপ্তানীমুখী কারখানার শ্রমিকদের দুর্ভোগের চিত্র তুলে টুকু বলেল, “গত দুই দিন যা দেখেছি আমরা, চোখের পানি রাখতে পারিনি। আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জে, যমুনার পাড়ে। লাখো মানুষের ভিড় হয়েছে। মানুষ যারা খেতে পারে না, তারাও খাবার নিয়ে তাদেরকে সাহায্য করেছে। প্রশাসনের কোনো লোক আসে নাই।”

কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছেন, তাদের পদত্যাগের দাবি জানানোর পাশাপাশি তিনি বলেন, এই সরকারেরও চলে যাওয়া উচিৎ।

“তারা (সরকার) যেভাবে এই ধরনের অতিমারীকে হ্যান্ডল করছে, তাদের আর এক মিনিট ক্ষমতায় থাকার অধিকার নাই। আমি তো মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর সুবুদ্ধির উদয় হোক। ক্ষমতা হস্তান্তর করুক।”

‘মানুষের পাশে দাঁড়ালেও গ্রেপ্তার’

মহামারীর মধ্যে মানুষকে ত্রাণ দিতে গেলেও বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “ফরিদপুর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জুলফিকার আলী জুয়েলকে ত্রাণ বিতরণ করা অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

“এই হচ্ছে বর্তমান সরকারের চেহারা। ত্রাণ বিতরণ করতে গেলেও গ্রেপ্তার করছে তারা। এত ভয় পায় তারা বিএনপিকে!”

টুকু বলেন, “আমাদের তৃণমূল কর্মীরা মানবেতর জীবন যাপন করছে, না খেয়ে থাকছে, মামলা মোকদ্দমায় জর্জরিত। এখন বিএনপির করোনা হেল্প সেন্টার থেকে আমাদের কর্মীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, নাকি ওয়ারেন্ট আছে।

“আমার প্রশ্ন-তাদের কাছে এখন মুখ্য উদ্দেশ্যটা কী? মানুষকে বাঁচানো, নাকি বিরোধী দলকে নিপীড়ন?

মহামারীতে বিএনপি মানুষের পাশে নেই বলে যে কথা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তার জবাবও দেন টুকু।

“আমরা কাজ করছি, মানুষের পাশে আছি, আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিনিয়ত খবর রাখছেন। ম্যাডাম অসুস্থ। যখনই আমাদের মহাসচিব দেখা করতে যান, তিনি জিজ্ঞাসা করেন-আমরা কী কাজ করছি, কীভাবে মানুষকে সহযোগিতা করছি।”

টুকু বলেন, “আমরা প্রতিদিন সারাদেশে স্থাপিত দলের হেল্প সেন্টার থেকে মানুষের কী আহাজারি, তার খবর পাচ্ছি। হসপিটালে ভর্তি হতে পারে না, আমাদের কাছে আসে। জেলা হসপিটালগুলোতে অক্সিজেন নেই।

“আমরা জনগনের দল হিসেবে যার যা আছে, তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আপনারা শুনে অবাক হবেন যে, এই প্রথম আমরা কেন্দ্র থেকে ঔষধ দিচ্ছি। এত দিন আমাদের দলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তাদের নিজেদের পয়সা দিয়ে মানুষকে সেবা করেছে।”

টুকু জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০টা জেলায় বিএনপির পক্ষ থেকে ৬০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার হেল্প সেন্টারের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে, ৯৫০০ জন করোনা রোগীকে ঔষধসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে, প্রায় ২০ লক্ষ মাস্ক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সাধারণ জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।”

২৫ হাজার ২৫০ জন কোভিড রোগীর খোঁজ-খবর টেলিফোনের মাধ্যমে রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।  

গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা নেওয়ার নিবন্ধন প্রক্রিয়ায়ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা মানুষকে সহায়তা করছে বলে তিনি জানান।

সারাদেশে বিএনপির করোনা হেল্প সেন্টারে ওষুধ সামগ্রী পাঠানো উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।

দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে নরসিংদীর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মানিকগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক এসএ জিন্নাহ ও নারায়ণগঞ্জের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুর হাতে ওষুধ সামগ্রী তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।

অনুষ্ঠানে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।