লকডাউনের সিদ্ধান্ত ‘হেমায়েতপুর থেকে’ আসে? প্রশ্ন ফখরুলের

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে’ বলে মনে করছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2021, 11:57 AM
Updated : 18 July 2021, 11:57 AM

সরকার যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে, তার সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এভাবে জনগনের সাথে ‘তামাশা’ করা হচ্ছে। 

“করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের লকডাউন লকডাউন খেলা এক মর্মান্তিক তামাশা। প্রথমে লক ডাউন, তারপরে কঠোর লকডাউন, পরে শিথিল লকডাউন ঈদের একদিন পর থেকে আরো কঠোর লকডাউন আর শিল্প কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা থেকে মনে হয়, সরকারি সিদ্ধান্তগুলো সবই পাবনার হেমায়েতপুর থেকে আসছে।”

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে যে, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। করোনা টিকা নিয়ে সরকার দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে গোটা পরিস্থিতিকে লেজে গোবরে করে ফেলেছে। … স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আকুল আহ্বান’ বিজ্ঞাপনে দেড় কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের কথা বলায় প্রমাণিত হয়েছে সরকার করোনার শুরু থেকেই জনগণের সাথে প্রতারণা করছে, টিকা মূল্য নিয়েও মিথ্যাচার করছে।”

এ অবস্থায় অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট ‘রোডম্যাপ’ জনগণের সামনে প্রকাশ করার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

গত সংসদ অধিবেশনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘করোনার ভয়াবহতা ঠেকাতে বিধিনিষেধ আন্তরিক ও কঠোরভাবে পালনের আকুল আবেদন’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায়।

ওই বিজ্ঞাপনে টিকার দাম, মাস্ক কেনা এবং কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় সরকারের খরচের হিসাবে অসঙ্গতি থাকার কথা তুলে ধরা হয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে ২৬ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন। গড়ে প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা দিলেও ২ বছর দুই মাস লাগবে। অথচ এখন পর্যন্ত টিকাপ্রাপ্তির কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকার দিতে পারছে না অথবা টিকা প্রাপ্তির উৎস সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।”

এজন্য সরকারের ‘অযোগ্যতা ও দুর্নীতিপরায়নতা’ দায়ী মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এ সকল দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। শুধু মিথ্যাচার করে জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার সরকারের নেই।”

তিনি বলেন, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের ‘অপরিকল্পিত পদক্ষেপের’ কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষ।

“বিএনপির বার বার এসব মানুষের জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদানের আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। বিএনপি আবারো দাবি জানাচ্ছে এসব মানুষদের জন্য ১৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হোক, ছোট ব্যবসায়ীদের পুঁজির ব্যবস্থা করা হোক এবং দিনে আনে দিনে খায় মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হোক।”

দেশের জেলা হাসপাতালগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় বেড,অক্সিজেন, আইসিইউ বেড বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, “আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের আহজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। গাছের তলা, অ্যাম্বুলেন্সে অথবা ভ্যানের ওপর রোগীর চিকিৎসার দৃশ্য কি মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ বা উন্নয়নের মডেল বাংলাদেশের ছবি দেখায়?”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊধর্বতন কর্মকর্তাদের ‘অপসারণ করা উচিত’ বলে তাদের দলের স্থায়ী কমিটি মনে করে।