একূল-ওকূল রাখতে গিয়ে দুই কূলই যাচ্ছে: মঈন খান

রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসান না হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্র নীতির ‘ব্যর্থতাই’ চোখে পড়ছে বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খানের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2021, 12:21 PM
Updated : 13 July 2021, 12:21 PM

তার ভাষ্যে, চীন-ভারত রেষারেষিতে সব কূল রক্ষা করতে গিয়ে কোনো কূলই রক্ষা করতে পারছে না সরকার।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মত জানান।

মঈন খান বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যা আমরা কেন সমাধান করতে পারছি না। যদি আমি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বই করি, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, তাহলে কেন সবাই আমাদের শত্রু হয়ে গেল?”

তিনি বলেন, “চীন, ভারত এবং পশ্চিমা শক্তির কারণে এই যে রোহিঙ্গার সমস্যাটি সেটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমার কথা হচ্ছে, এই রোহিঙ্গা সমস্যা আগেও দুই দুই বার বাংলাদেশে এসেছিল। আমরা তো সেই সমস্যাটির সমাধান করেছি। এবার কেন পারছি না?

“এরকম লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা তো বাংলাদেশে ৭০ এর দশকের শেষ দিকে এসেছিল, এরকম লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা তো ১৯৯১ সালের পরে এসেছিল। আমরা মনে আছে, তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘে গিয়ে আমি সেখানে জাপানি ও চাইনিজ রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনা করে জাতিসংঘের তৎকালীন যিনি মহাসচিব ছিলেন, তার মধ্যস্থতায় সেই সমস্যাটির সমাধানে আমিও একজন ক্ষুদ্র অংশীদার ছিলাম এবং সমস্যার সমাধান হয়েছিল।”

বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে পারছি না, একূল-ওকূল দুই কূল রাখতে গিয়ে কোনো কূলই রাখতে পারছি না।”

উন্নয়নের সঙ্গে গণতন্ত্রও চাই

মঈন খান বলেন, “আজকের সরকারের যে বক্তব্য- গণতন্ত্র পরে উন্নয়ন আগে- সেই নীতিতে তো আমরা একমত হইনি। সেই নীতিতে একমত হলে আমাদের পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে ভিন্ন রাষ্ট্র করার কোনো কারণ থাকতে পারে না।

“আমরা এই নীতিতে বিশ্বাসী গণতন্ত্র ও উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি চলাচল করবে। সেই কথাটি জোর দিয়ে আমরা এই দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সত্যে পরিণত করতে যদি না পারি তাহলে এদেশের স্বাধীনতা, উন্নয়ন যা কিছুই বলুন সব কিছু অর্থহীন।”

বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আজকে আমাদের সমস্ত কুক্ষিগত হয়ে একটি দলের কাছে বন্দি, যারা কেবল আমি তার বাইরে কিছু চিনে না। এভাবে তো একটা দেশ চলতে পারে না।”

গণতন্ত্রের পাশাপাশি সম্পদ বণ্টনের ন্যায্যতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে মঈন খান বলেন, “পাকিস্তানের ২২ ধনী পরিবারের বিরুদ্ধে আমরা বিদ্রোহ করেছিলাম। আজকে বাংলাদেশে সরকার ২২শ ধনী পরিবার সৃষ্টি করেছে। আর কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে।

“সম্প্রতি একটি সমীক্ষা হয়েছে সেখানে আমি দেখেছি- বিশ্বের যে কয়টি দেশে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ছে, তার মধ্যে শীর্ষে হচ্ছে বাংলাদেশ। আমরা কি এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম?”

‘সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিস অ্যান্ড প্রোসপারিটি সোসাইটি (এসএওয়াইপিপিএস)’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: বিআরআই (বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) অথবা কোয়াড (কোয়াড্রাল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ)’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়।

এসএওয়াইপিপিএসের চেয়ারম্যান সাজিদুল হকের সভাপতিত্বে এই ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম, বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন অসীম, সারোয়ার হোসেন, সাংবাদিক এবিএম শামসুদ্দোজা বক্তব্য রাখেন।