হাসেম কারখানায় অনিয়ম আগে দেখা হয়নি কেন: ফখরুল

অগ্নিকাণ্ডের পর নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুডস কারখানায় অনিয়মের যে বিষয়গুলো বলা হচ্ছে, তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগে দেখাখেনি কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2021, 01:08 PM
Updated : 11 July 2021, 01:08 PM

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গে এই প্রশ্ন করেন।

ফখরুল বলেন “স্থায়ী কমিটি মনে করে যে, প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনাটি হত্যার পর্যায়ে পড়ে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থা কল-কারখানার নির্মাণ মান, পরিবেশ এবং অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা, নিয়মিত পরিদর্শন ও নজরদারি না করার কারণেই এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।।”

ফায়ার ব্রিগেডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “২৭ ঘণ্টা যাবত আগুন নেভাতে না পারা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”

গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ওই কারখানায় আগুন লেগে অর্ধ শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী নিহত হয়।

অগ্নিকাণ্ডের পর ওই কারখানায় ত্রুটিপূর্ণ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন পথে তালা লাগানোর বিষয়টি প্রকাশ পায়। কারখানাটিতে শিশু শ্রমিক ব্যবহারের বিষয়টিও হয়েছে প্রকাশ্য।

পুলিশ ইতোমধ্যে হাসেম ফুডসের মালিক আবুল হাসেম, তার ছেলেরাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।

এই অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে দোষীদের শাস্তি এবং নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান ফখরুল।

তিনি জানান, শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অগ্নিকাণ্ডের ৫২ জনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার অবহেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

‘কারফিউ সমাধান নয়’

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কাউফিউ জারি সমাধান হবে না বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “যদি আপনি সঠিকভাবে সাধারণ মানুষের অর্থের ব্যবস্থা করতে না পারেন এবং তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে না পারেন, সেখানে ওই অপরিকল্পিত লকডাউনও তো সঠিক সমাধান আনতে পারবে না।”

সরকার এখন যে লকডাউন চালাচ্ছে, তাতে জীবিকার তাগিদে বেরিয়ে আসা মানুষই মূলত হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

“মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে, বলা যায় যে, অনেকে খাদ্যের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। খালি ধমক দিয়ে আর গরিব মানুষকে জেলের মধ্যে পুরে দিলে তো হবে না। আমি পত্রিকায় দেখলাম সাড়ে ৪ হাজার মানুষকে জেলে দেওয়া হয়েছে। এরা কারা? তারা সমস্ত গরিব মানুষ। তারা দিন আনে দিন খায়, হয়ত রিকশা চালায়, ঠেলা গাড়ি চালায়, হয়ত কোনো একটা রেস্টুরেন্টে চাকরি করে। এমনও কথা বেরিয়েছে যে, বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার আনতে গেছে, সেখানে তাকে গ্রেপ্তার করার ফলে সেই বাবা অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন।”

লকডাউনের মধ্যে সরকারি কোনো সহায়তা না পেয়ে অনানুষ্ঠানিক অরথনৈতিক খাতের মানুষরা পথে বসে গেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আমি বৃটেনের খবর জানি, যুক্তরাষ্ট্রের খবর জানি, সেখানে যারা ছোট ছোট রেস্টুরেন্ট চালান, ইনফরমাল সেক্টর যেগুলো আছে, এরা কিন্তু সকলেই আগেই প্রণোদনা পেয়ে গেছে।”

ঢাকার সিভিল সার্জন জেলার হাসপাতালগুলো থেকে সাংবাদিকদের কোভিড সংক্রান্ত তথ্য না দিতে যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।

“এই ধরনের সার্কুলার প্রমাণ করে যে, তারা (সরকার) প্রকৃত তথ্য গোপন করছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা সরকার প্রকাশিত সংখ্যার চাইতে অনেক বেশি। এই ধরনের তথ্য গোপনের প্রচেষ্টা স্বাধীন গণমাধ্যম ও গণতন্ত্র পরিপন্থি।”

ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিক তানভীর হাসান তনুকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানান তিনি।

‘সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি’

সরকার স্বাস্থ্য খাতে নানা ব্যয়ের ফিরিস্তি দিলেও স্বাস্থ্যসেবার মান না বাড়ায় তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ নেই, অক্সিজেন নেই, সিলিন্ডার নেই, বেড নেই-এই যে চরম অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি। যার ফলেই আজকে করোনা পরিস্থিতি আক্রমণাত্মক হয়ে দেখা দিচ্ছে, একে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।”

এই সময়ে মেগা প্রকল্পে ব্যয় না করে সেই অর্থ প্রান্তিক মানুষগুলোকে বাঁচাতে ব্যয় করার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ নামের আড়ালে উপহারের ঘর নির্মাণে ‘হরিলুট’ চলছে দাবি করে অবিলম্বে এই প্রকল্প বন্ধ করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জানানো হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

মহামারী মোকাবেলায় বিএনপির দেওয়া আপৎকালীন কমিটি গঠনসহ ৫ দফা প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতিক্রিয়ার জবাবে ফখরুল বলেন, ““আমরা শুধু সমালোচনা করি না, পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের প্রস্তাবও দিই। উনারা সুনির্দিষ্টভাবে বলুক কোনটা কোনটা বাস্তবায়ন করেছেন। চর্বিত চর্বণ তো প্রতিদিন উনারা করছেন।

“তাদের সমস্যাটা হচ্ছে যে, তারা কোনো সমালোচনা শুনতে চান না। এই যে তাদের একলা চল নীতি, দুর্নীতি কর নীতি, লুটপাট করে নীতি, এটাই তো এই দেশটাকে চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে নিয়ে গেছে।”

মহামারী মোকাবেলায় সরকারের ওয়ার্ড পর্যায় কমিটি গঠন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “এখন আবার ওয়ার্ড কমিটিতে দুর্নীতি শুরু হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, সরকারের যে হাসপাতালগুলো আছে সেগুলো ইকুইপড করুক, সেই হাসপাতালগুলোতে বেড সংখ্যা বাড়াক, ডাক্তার বাড়াক, সেই হাসপাতালগুলোকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবারহ করুক, আইসিইউ বেড রাখুক। তাহলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।”