বাসদ নেতা মুবিনুল হায়দারের মরদেহ গবেষণায় দান

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ শিক্ষা ও গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দান করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2021, 01:25 PM
Updated : 8 July 2021, 01:26 PM

বৃহস্পতিবার দুপরে ঢাকা মেডিকেলের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান সেগুফতা কিশোয়ারের কাছে প্রবীণ এই কমিউনিস্ট নেতার মরদহে হস্তান্তর করা হয়।

এর আগে ঢাকা মেডিকেলে ডা. মিলনের সমাধিস্থলে মুবিনুল হায়দারের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে তার মরদেহ সেখানে নিয়ে যান।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে মারা যান মুবিনুল হায়দার। ৮৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ ছিলেন অকৃতদার।

মুবিনুল হায়দার চৌধুরী।

বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটি ও নির্বাহী ফোরামের পক্ষে আলমগীর হোসেন দুলাল, মানস নন্দী, উজ্জ্বল রায় ও ফখরুদ্দিন কবির আতিক ঢাকা মেডিকেলে প্রয়াত নেতার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ভারতের সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়ার (কমিউনিস্ট) [এসইউসিআই (সি)]  সাধারণ সম্পাদক প্রভাষ ঘোষের পক্ষেও শ্রদ্ধা জানান মানস নন্দী।

বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে বজলুর কেন্দ্রীয় নেতা রশীদ ফিরোজ ও রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) পক্ষে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাফী রতন ও ফজলুর রহমান, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ওয়াকার্স পার্টির (মার্কসবাদী) বিধান দাশ ছাড়াও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধা জানানো হয় মুবিনুল হায়দারের প্রতি।

মুবিনুল হায়দার গত ১৪ মার্চ গোসল করতে গিয়ে বাথরুমে পড়ে যান। তাতে তার মাথায় আঘাত লাগে ও রক্তপাত হয়। তার মেরুদণ্ডের একটি হাড়ও ভেঙে যায় সে সময়। স্নায়ুতে চাপ লাগার কারণে দুই হাত, দুই পা আংশিক অবশ হয়ে পড়ে।

তারপর থেকে তিনি অসুস্থ ছিলেন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ জুন থেকে তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগেও আক্রান্ত ছিলেন তিনি।

১৯৩৫ সালে চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া মুবিনুল হায়দারের বেড়ে ওঠা ভারতের কলকাতায়। একসময় ভারতের কমিউনিস্ট দল সোশালিস্ট ইউনিটি সেন্টারে (এসইউসিআই) যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি দেশে ফেরেন।

স্বাধীনতার পর গঠিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের অভ্যন্তরে মতাদর্শিক বিতর্ক শুরু হলে ১৯৮০ সালে আ ফ ম মাহবুবুল হক ও খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি অংশ বেরিয়ে বাসদ গঠন করে।

জাসদ ভেঙে বাসদ হওয়ার পেছনে মুবিনুল হায়দারের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তাকে বাসদের তাত্ত্বিক নেতা মনে করা হত।

পরে আ ফ ম মাহবুবুল হক ও খালেকুজ্জামানের মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে বাসদ আবার ভাঙে। তখন খালেকুজ্জামান নেতৃত্বাধীন অংশকেই ছায়া দিয়ে ছিলেন মুবিনুল হায়দার।

২০১৩ সালে খালেকুজ্জামানের বাসদ থেকে বেরিয়ে বাসদ (মার্কবাদী) গঠন করেন মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ও শুভ্রাংশু চক্রবর্তী।

বলা হয়, এসইউসিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিবদাস ঘোষকে আন্তর্জাতিক সাম্যবাদী আন্দোলনের ‘অথরিটি’ না মানায় আলাদা বাসদ গঠন করেন মুবিনুল হায়দার। তার সঙ্গে তখন শুভ্রাংশু চক্রবর্তী ছিলেন। পরে শুভ্রাংশু চক্রবর্তীও বাসদ (মার্কসবাদী) থেকে বেরিয়ে আলাদা দল গঠন করেন। ফলে বাসদের একটি অংশ নিয়েই ছিলেন মুবিনুল হায়দার।