কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ না পাওয়াদের কী হবে: জি এম কাদের

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভারাসের টিকা কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ যারা পাননি তাদের বিষয়ে ‘সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত’ সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2021, 11:35 AM
Updated : 8 July 2021, 11:59 AM

এই টিকা পাওয়ার দীর্ঘসূত্রতা দেশকে ‘অর্বণনীয় ভয়াবহতার’ দিকে নিয়ে যাবে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃবিতে বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, “করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে এখন সারা দেশই করোনার হটস্পট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই করোনা আক্রান্তের সাথে ভয়াবহ ভাবে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।”

“অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড এক কোটি তিন লাখ ডোজ পেয়ে প্রায় ৪৫ লাখ মানুষকে দেওয়া হয়েছে। ১৪ লাখ ৪০ হাজার জন দ্বিতীয় ডোজ পায়নি। যারা দ্বিতীয় ডোজ পায়নি তাদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষ জানে না।”

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ৯ লাখ পেরিয়ে যায় গত ২৯ জুন।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ৪ জুলাই তা ১৫ হাজার ছাড়ায়।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের তিন কোটি ডোজ কেনার জন্য গত বছরের শেষ দিকে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। সেই টিকার প্রথম চালান পাওয়ার পর ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গণটিকাদান শুরু হয়।

কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ। পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় ২৫ এপ্রিল দেশে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যায়নি।

এ পরিস্থিতিতে সরকার চীনা টিকা কেনার উদ্যোগ নিলেও যারা প্রথম ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, তাদের জন্য ওই টিকার বিকল্প নেই।

কেনা টিকার বাইরে ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে ৩২ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড পেয়েছিল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে হাতে ছিল এ টিকার ১ কোটি ২ লাখ ডোজ। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, রোববার পর্যন্ত ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনকে কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হলে প্রয়োজন ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৩০ ডোজ টিকা।

৪ জুলাই পর্যন্ত হিসাবে, এ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৯১ হাজার ৭০৭ জন। সব মিলিয়ে টিকা দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ১ লাখ ১১ হাজার ৭২২ ডোজ।

এই হিসাবে এ পর্যন্ত যারা প্রথম ডোজ পেয়েছেন তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ পূর্ণ করতে হলে আরও ১৫ লাখ ২৮ হাজার ৩০৮ ডোজ টিকা দরকার।

বিবৃতিতে জিএম কাদের বলেন, “বিশেষজ্ঞদের মতে কমপক্ষে দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারলেই করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। সে অনুযায়ী ১৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত টিকার আওতায় এসেছে শতকরা হিসাবে মাত্র ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারি সূত্র অনুযায়ী বর্তমানে বিভিন্ন সোর্স থেকে প্রাপ্ত টিকার মজুদ মাত্র ৫৭ লাখ, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার সরকারি ভাবে বলা হয়েছে প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে, যাতে প্রয়োজনীয় জনগোষ্ঠীকে টিকা দিতে এক ডোজ করে ৪ থেকে ৫ বছর সময় লেগে যাবে এবং দুই ডোজ করে দিতে গেলে এর প্রায় দ্বিগুন সময় লাগবে। সেটাও সম্ভব হবে যদি সময় মত বাকী টিকা পাওয়া যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছে, করোনার টিকা নিলে আক্রান্তের হার যেমন কমে তেমনি ভাবে কমে যায় আক্রান্তদের মৃত্যু ঝুঁকি।”

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, “যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে করোনা দেশকে কোন অবর্ননীয় ভয়াবহতার দিকে নিয়ে যাবে সে বিষয়ে দেশবাসী উদ্বিগ্ন। মহামারি করোনার হাত থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে দ্রুততার সাথে গণটিকা কর্মসূচি আরো জোরালো করতে হবে।”