নিজেকে বিরোধী দলের নেতা বলে ‘এক্সপাঞ্জের মুখে’ বিএনপির হারুন

নিজেকে সংসদের বিরোধী দলের নেতা বলে জাতীয় পার্টির বিরোধিতার মুখে পড়লে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2021, 10:55 AM
Updated : 17 June 2021, 10:55 AM

বৃহস্পতিবার ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সময় এই ঘটনা ঘটে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংসদ সদস্য হারুনকে প্রথমে ১০ মিনিট সময় দেন স্পিকার। নির্ধারিত সময়ের শেষের দিকে একটু সময় বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য স্পিকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

এই সময় হাসতে হাসেত তিনি বলেন, “আমিই তো বিরোধীদলীয় নেতা।”

এসময় স্পিকার বলেন, ‘নো’। তবে তার সময় বাড়িয়ে দেন।

এর সঙ্গে সঙ্গে হই চই করে হারুনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।

এক পর্যায়ে বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান এবং বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান।

তখন হারুন বলেন, “মাননীয় স্পিকার আমি আপনার প্রটেকশন চাই।”

স্পিকার রাঙ্গাকে আশ্বাস দেন হারুনের এই কথাটি এক্সপাঞ্জ করা হবে। এরপর সংসদ শান্ত হলে আবার বক্তব্য শুরু করেন বিএনপির এই সংসদ সদস্য।

বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। তবে সংসদের এক সময়কার প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জাতীয় পার্টিকে ‘বিরোধী দল’ হিসেবে স্বীকার করে না।

সংসদে এ নিয়ে আগেও কথা বলেছেন দলটির সংসদ সদস্যরা। সংসদের বাইরেও জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।

বৃহস্পতিবারও হারুন বলেন, “জাতীয় সংসদের সরকারি ও বিরোধী দল একাকার। আমাদের বিরোধী দলনেতা বাইরে বলছেন, বিরোধীদলের কোনো মূল্য নাই। আর সরকারি দল, তাদের কি কোনো মূল্য আছে?

“সরকারি দলের মন্ত্রীরা বরাবরই বলছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আমার কাছে কেউ অপরিহার্য নয়। এভাবে কি কোনো রাষ্ট্র চলতে পারে? সরকারি-বিরোধীদল সম্মিলিত মেধা শক্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।”

বাজেট প্রঙ্গগে তার দাবি বর্তমান সরকারের আগের ১২টি বাজেটের কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি।

প্রস্তাবিত বাজেটকে অত্যন্ত ‘বৈদেশিক নির্ভর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এবারের বাজেট ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচাইতে বেশি ঘাটতির বাজেট। এই বাজেট বাস্তবায়ন করোনাকালে মোটেই সম্ভব নয়। সেই দক্ষতাও নেই।“

আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সমালোচনা করে বিএনপির এই সাংসদ বলেন, “আজকে আমরা অপহরণ গুম খুনের কথা বলছি। এই কিছুদিন আগে একজন আলেম নিখোঁজ হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- খোঁজ নিচ্ছি। আজকে যদি তাকে ফিরিয়ে দিতে না পারেন এটা রাষ্ট্রের জন্য বড় ব্যর্থতা হবে।

“আদনানকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে। তার পরিবারের আহাজারি আপনাকে শুনতে হবে।“

এছাড়া খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি করেন তিনি।

‘শেয়ারবাজার আইসিইউতে’

হারুন আরও বলেন, “একটি রাষ্ট্রের আর্থিক কাঠামোতে দৃষ্টি দিতে গেলে সেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থানগুলোর প্রতি তাকাতে হবে। আমি নিঃসন্দেহে বলব বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছে।

“সেখানে মাঝে একটু খুলছে। আবার চোখ বন্ধ করছে। চোখ খুলেই দেখে দরবেশ বাবা চারদিকে ঘিরে আছে। তখন চোখ বন্ধ করে রাখে।”

‘ব্যাংক ভর্তি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে’

ব্যাংকগুলো ‘সাংঘাতিকভাবে আক্রান্ত’ উল্লেখ করে হারুন বলেন, “লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। ঋণগ্রহীতারা ঋণ ফেরত দিচ্ছে না। তারা ঋণখেলাপি হচ্ছে না। তারা দেদারসে আনন্দ ফুর্তি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

“যে কারণে সকল ব্যাংক বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি এবং বঙ্গবন্ধু চিকিৎসক পরিষদের ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন। আর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কারণে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে একটি ভয়াবহ দুর্যোগ কবলিত দেশে পরিণত হয়েছে। আইলাআক্রান্ত উপকূলীয় মানুষ যে রকম বিপর্যস্ত, সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এরকমই।”

তার বক্তব্যের পর সরকারি দলের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ আলোচনায় অংশ নেন।

তিনি বলেন, “বিএনপির সংসদ সদস্য সংবিধানকে প্রতারণার দলিল বলেছেন, নিজেকে স্বঘোষিত বিরোধীদলীয় নেতা দাবি করেছেন। এগুলো এক্সপাঞ্জ করতে হবে। সংবিধান বুটের তলায় পিষ্ট করে জঞ্জালের রাজনীতি শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান।

“ব্যাংক লুটপাটের হোতা জিয়াউর রহমান। তার আমল থেকেই ব্যাংকে লুটপাট শুরু। এখনও দেখা যাবে ৯০ শতাংশ ডাইরেক্টর বিএনপি সমর্থক।“

তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, “দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সুশসানের অভাব বাজেট বাস্তবায়নের অন্তরায়।”

ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে সংরক্ষিত আসনের লুৎফুননেসা খান বলেন, “স্বাস্থখাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তারচেয়ে বড় কথা এই অর্থ যথাযথ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবহার করা হয় না। গবেষণা খাতের সব টাকাই রয়ে গেছে। ক্রয়ে অভাবনীয় দুর্নীতি হয়েছে।”

আওয়ামী লীগের শফিউল ইসলাম বলেন, “বিরোধী দলকে ১৫মিনিট সময় দিচ্ছেন আর আমরা পাচ্ছি সাত মিনিট। এটা বৈষম্য।

“বেশি সুযোগ দেওয়ার পরও তারা বলেন সময় দেওয়া হয় না। কথা বলতে দেওয়া হয় না।”

জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের রওশন আরা মান্নান বলেন, “এই বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা হতাশ হয়েছেন। সাধারণ মানুষের জন্য খুব বেশি কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না।”

বিকল্প ধারার এম এ মান্নান বলেন, “স্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতে সক্ষমতার অভাব, ব্যর্থতা মেনে নেওয়া যায় না।”

অন্যদের মধ্যে আলোচনায় আরও অংশ নেন, আ ক ম সারোয়ার জাহান, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, নাসরীণ জাহান রত্না, আনোয়ারুল আজিম আনার প্রমুখ।

আরও পড়ুন