বাজেট আলোচনায় সংসদে না থাকায় সমালোচনার মুখে অর্থমন্ত্রী

বাজেট আলোচনার সময় সংসদে উপস্থিত না থাকায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2021, 02:29 PM
Updated : 16 June 2021, 02:29 PM

বুধবার প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, “আমরা বাজেট বক্তৃতা দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের অর্থমন্ত্রীকে গতকালকেও আমরা সংসদে পাই নাই। আজকেও নাই।”

তিনি বলেন, “অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশ থেকে কারা টাকা পাচার করছে, তা তিনি জানেন না। সে তালিকা চান সংসদ সদস্যদের কাছে। সংসদ সদস্যরা কীভাবে তালিকা দেবে?

“তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। তিনি তালিকা নেবেন কারা অর্থ পাচার করে। পিকে হালদার টাকা নিয়ে বিদেশে গিয়ে ঘুমায়, আর তার বান্ধবীদেরকে এখানে ঘুম পাড়ান। এটাতো আমরা চাই নাই।“

পিকে হালদারদের মত লোকরা যেন অর্থ নিয়ে বিদেশে যেতে না পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অর্থমন্ত্রী অর্থ খাতের একজন মেধাবী লোক। তিনি তো ভালো জানেন কারা অর্থ পাচার করে। ওনার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।”

পীর ফজলু বলেন, “প্রত্যেকটা অডিট রিপোর্টে আছে কিভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। সেখান থেকে তিনি কারা টাকা পাচার করে তথ্য নিতে পারেন।”

সংসদে উত্থাপিত অডিট রিপোর্টের বরাত দিয়ে বিরোধী দলের এই আইনপ্রণেতা বলেন, “আমি সরকারি হিসাব থেকেই দেই কারা টাকা পাচার করে। সিএজির গত চারবছরের অডিট প্রতিবেদন বলছে, ৩১ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে।

“চার বছরে রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকে জালিয়াতি, সরকারি অর্থের মোট অনিয়মের ৫২ শতাংশই ব্যাংকিং খাতে। নয় বছরে অনিয়ম বেড়েছে ১৬ গুণ। এটি অডিটর জেনারেলের চার বছরের অডিট থেকেই এসেছে। এখান থেকে উনি (অর্থমন্ত্রী) পান না কেন?”

অনিয়মের এই টাকা বিদেশে যায় মন্তব্য করে এই সংসদ সদস্য বলেন, “অর্থমন্ত্রী ঠেকাতে পারেন না। আমাদের শেয়ারবাজার লুটপাট হয় তিনি খুঁজে পান না। বাংলাদেশ ফিনিন্সিয়াল ইন্টালিজেন্স ইউনিট বলছে, পাঁচ বছরে এক হাজার ২৪টি অর্থ পাচারের প্রমাণ মিলছে।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রীরও সমালোচনা করেন তিনি। গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “২০১৭২–১৮ অর্থবছরে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে স্বাস্থ্যখাতের যন্ত্রপাতি কেনায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাফাই না গেয়ে যারা দুর্নীতি করছে তাদেরকে ধরেন। এই করোনাকালে এসে অন্তত বিবেক জাগ্রত হোক।“

মানুষের চিকিৎসা ও টিকা নিশ্চিত করার কথা বলেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির মোশাররফ হোসেন বলেন, “বাজেটে ঘাটতির টাকা কোথা আসবে স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। ঋণের সুদই দিতে হবে ৬৯ হাজার কোটি টাকা।”

তিনি শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

তিনি বলেন, “টিকার দাম বলে দেওয়ায়, গত ৬ জুন একজন অতিরিক্ত সচিবকে ওএসডি করা হয়েছে। মানুষের করের টাকায় টিকা কেনা হচ্ছে, দাম জানার অধিকার মানুষের আছে।

“এজন্য একজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করার ঘটনা দুঃখজনক। প্রথমে শুধু একটি নয়, অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গেও টিকার জন্য আলোচনা করার দরকার ছিল।”

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য সদয় হতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান মোশাররফ।

অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের রমেশচন্দ্র সেন, ইকবাল হোসেন, ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ নাদিরা ইয়াসমিন, নাহিদ এজহার খান, জাতীয় পার্টির আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।