‘ভুয়া রিপোর্ট’ বানিয়ে জন্ম তারিখ নিয়ে রিট: ফখরুল

জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই ‘ভুয়া রিপোর্ট’ বানিয়ে খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ নিয়ে রিট করা হয়েছে বলে অভিযোগ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2021, 12:31 PM
Updated : 14 June 2021, 12:31 PM

সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখের নথি তলব নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘যে বিষয়টার (খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ) কথা বলা হয়েছে- এটা তো ফেইক। এভারকেয়ারের যে রিপোর্টের কথা বলা হয়েছে, এই ধরনের কোনো রিপোর্টই এভারকেয়ার করে নাই।

“যে তারিখটা বসিয়েছে তারা- এটা ফলসলি করা হয়েছে। যে কাগজটা তারা দিয়েছে যার উপরে আদালত একটা হুকুম দিয়েছে। এই হুমুকটা আমি জানি না বিং এ লইয়ার.. একটা কিভাবে দিলেন?”

দেশে ‘রাজনীতি নেই’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “এখন উদ্দেশ্যই তাদের একটাই- এই ধরনের (জন্মদিন) ইস্যুগুলো তুলে এনে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা, ডায়ভার্ট করার চেষ্টা করা, মূল সমস্যা থেকে জনগণকে ভুল দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। আর কিছুই না। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এসব তারা করছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এখানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে একদলীয় শাসনে দেশ চলছে। এটা থেকে প্রমাণিত হয়- জুডিশিয়রি ইজ নট ফ্রি। জুডিশিয়ারির কিন্তু এটা আমলেই নেওয়া উচিত ছিল না। দে শুড হেল বিন টোটালি রং।”

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন- বুহ লোকের কিন্তু জন্ম তারিখ আসল একটা আর সার্টিফিকেটে তারিখ আরেকটা আছে।

“কারণ হচ্ছে, বিশেষ করে আমাদের জেনারেশনের সময়ে তখন সঠিকভাবে বাবা-মায়েরা জন্ম তারিখ মনে রাখতে পারতেন না। জন্ম কবে হয়েছে, ডায়েরি-টায়েরি মেইনটেইন করতেন না। ফলে দুই রকম হতে পারে।”

এটা কোনো দিন ইস্যু হতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, এখন পার্টিকুলার একটা ডেটে কেউ জন্ম নিতে পারবে না- এটা একটা ঘোষণা দিয়ে দিলে তো হয়ে যায়। নো বডি ওইদিন …, হিসাব করে আপনাকে সন্তানের জন্মদানের কথা চিন্তা করতে হবে। এছাড়া তো উপায় নাই।”

গত শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরতে সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

‘এনআইডি স্বরাষ্ট্রে গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন বিনষ্ট হবে’

মির্জা ফখরুল বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কর্তৃত্ব হস্তান্তর করা হলে তা স্বাধীন নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যুনতম সম্ভাবনাটুকুক বিনষ্ট করবে।

এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহবানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

‘শেকড় আছে বলেই বিএনপি আছে’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বিএনপির শেকড় আছে বলেই বিএনপি টিকে আছে। এত নির্যাতন, গুম-খুন, হাজার হাজার মামলার পরও বিএনপি টিকে আছে শুধু এই দলের ‘ডিপ রুট’, মানুষের হৃদয়ের অনেক গভীর চলে গেছে বিএনপি।”

‘ঋণ নির্ভর অর্থনীতি’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এত বেশি ঋণ নির্ভর হয়ে পড়ছে অর্থনীতি এবং এটা এখন শেষ সীমায় এসে পৌঁছে যাচ্ছে। অর্থনীতিতে গত এক যুগ ধরে সরকারের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক নীতির বাস্তবায়ন চলছে।

“যার প্রভাবে এক ধরনের মন্দাভাব চলছে, উৎপাদন খাত শ্লথ হয়ে পড়েছে। ফলে রাজস্ব আয় কাংখিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। ভ্যাট, শুল্ক ও আয়কর সব ক্ষেত্রে আদায় কম। আয় কমে যাওয়ায় খুব স্বাভাবিকভাবেই খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।”

দেশে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘দেখুন দুর্নীতি কোন মাত্রায় গেছে যে, পাবনার মতো জেলা শহরের একটা কোম্পানির কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছে ভ্যাটের জন্য। ব্যবসায়ীদের একটা নিরব কান্না আছে। এভাবে তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চলছে।”

রিমান্ডে নিয়েও নির্যাতন না করার জন্য আলাদা অর্থ দিতে হয় বলে অভিযোগ বিএনপি মহাসচিবের।

‘আমার কোনো ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট নেই’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমার ফেইসবুক, টুইটার এগুলোর রহস্য আমি খুব উদ্বিগ্ন। আমি অনেকবার বলেছি। আমি ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার চিঠি দিয়েছি, উকিল নোটিশ দিয়েছি। তারপরেও দেখি যে, আমার নামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট খোলা আছে।

“আমরা যতদূর জানি যে, সার্ভিলেন্সে এই সমস্ত মিডিয়ায় যখন গোয়েন্দারা ঢোকে তখন তারা বিভিন্ন রকম তৈরি করে। এটা শোনা কথা। কোথায় যাবো বলেন? কোনো ফেইসবুক নেই। যেগুলো আছে সেগুলো ফেইক।“

এ নিয়ে তিনি একবার বিবৃতি দিয়েছেন জানিয়ে বলেন, “আমি জিডি করেছি থানায়, মামলা করেছি, উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে।”