তিন উপনির্বাচন: নৌকার মনোনয়ন কার ভাগ্যে?

মহামারীর মধ্যে তিন সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন নিয়ে ভোটের মাঠ কতটুকু গরম হবে তা বুঝতে ঢের বাকি এখনও। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বসে নেই।

কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2021, 01:57 PM
Updated : 11 June 2021, 02:24 PM

আগামী ২৮ জুলাইয়ে হতে যাচ্ছে ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন। তিন আসনেই ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংসদরা। 

এসব আসনে দলীয় মনোনয়ন কারা পাচ্ছেন তা নিয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আলোচনা থাকলেও সবার নজর ঢাকার আসনটির দিকেই বেশি।

শনিবারই জানা যাবে কে পাচ্ছেন এসব আসনে আওয়ামী লীগের টিকেট। এদিন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত হবে প্রার্থী।

ঢাকায় হাল ছাড়ছেন না কেউ

গত ৪ এপ্রিল সাংসদ আসলামুল হকের মৃত্যুতে শুন্য হয় ঢাকা-১৪ আসন।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে বিগত নির্বাচনে যারা মনোনয়নের জোরালো দাবিদার ছিলেন তারা এবারও সক্রিয় হয়েছেন। তাদের সঙ্গে আশপাশের আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন এমন অনেক নেতার নজরও এখন এই আসনটির দিকে।

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন ৩৪ জন, যাদের মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী। 

এছাড়া দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা দেলোয়ার হোসেন, যুব মহিলা লীগের উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এ বি এম মাজহারুল আনাম। ফুয়াং গ্রুপের পরিচালক আরিফ আহমেদ চৌধুরীও মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন।

২০০৮ সালে আসলামুল হক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এলাকায় নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তোলায় সর্বশেষ দুই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিল কম।

আসনটিতে আসলামের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন ও দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী।

এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাই যার যার জায়গা থেকে আশাবাদী। 

প্রায় ৩৯ বছর সময় ধরে এলাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা জানিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এই আসনের কাউন্সিলর ছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে এই আসনের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যে কোনো বিপদে, প্রয়োজনে এলাকার মানুষ আমাকে পাশে পায়। সেজন্য তারাও আমার পাশে আছে, এটাই আমার শক্তি। সিদ্ধান্ত দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”

বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী বলেন, “গত নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারও চাইব। নতুন অনেকেই এ আসনে প্রার্থী হতে চাইছেন। আমরা আমাদের মতো করে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। উনার কাছে আমাদের দাবি হল এই এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে এমন প্রার্থীকে যেন মনোনয়ন দেওয়া হয়।”

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বিগত নির্বাচনগুলোতে ঢাকা-১৬ আসনে, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল গত নির্বাচনে ঢাকা-১৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এবার দুজনই ঢাকা-১৪ আসনে প্রার্থী হতে চাইছেন।

অন্য আসন থেকে এসে মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে মিরপুরে রাজনীতি করছি। অনেক মানুষ অনুরোধ করছে প্রার্থী হতে, তাই মনোনয়নপত্র নিয়েছি, বাকিটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেখবেন।“

কুমিল্লা, সিলেটেও প্রত্যাশীদের চাপ

কুমিল্লা-৫ আসনে ৩৫ ও সিলেট-৩ আসনে ২৫ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

কুমিল্লায় যারা দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন এই আসনের প্রয়াত সাংসদ আবদুল মতিন খসরুর স্ত্রী সালমা সোবহান খসরু, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসেম খান, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী, আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন, যুবলীগের সহ-সম্পাদক এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া, ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মোহাম্মদ নিজামুল ইসলামসহ ৩৫ জন।

আর সিলেট-৩ আসনে মনোয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন এই আসনের প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুল আলম, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবীর উদ্দীন আহমেদসহ ২১ জন।

নেতারা কী ভাবছেন?

বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশীর বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় আমাদের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী একটু বেড়েছে। ১২ তারিখ মনোনয়ন বার্ডের সভায় চূড়ান্ত হবে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন।”

নেতাকর্মীদের বিপুল আগ্রহ থাকলেও আসনগুলোতে এতো আবেদনকে ভালোভাবে দেখছেন না আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একই আসনে বিপুল সংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী বা আগ্রহী হওয়াটা ‘ভালো নয়’।

“দুটি কারণে এটি হচ্ছে। একটি হল এই মুহূর্তে রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের বিকল্প শক্তির তেমন কোনো অবস্থান নেই। আমাদের বিরোধী যারা আছে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও জনসমর্থনের অভাবের কারণে অনেকের মধ্যেই এমন ধারণা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেই জয় সুনিশ্চিত।”

“আমি মনে করি, রাজনীতিতে এটাকে খুব ভালো মনে করার কোনো সুযোগ নেই,” বলেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী তিন উপনির্বাচনে আগামী ১৫ জুন মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। মনোনয়ন বাছাই হবে ১৭ জুন। ১৮, ১৯ ও ২০ জুন আপিলের দিন ঠিক করা হয়েছে। প্রার্থিতা বাতিলের শেষ দিন ২৩ জুন। প্রতীক বরাদ্দের তারিখ ২৪ জুন।