সীমান্তের জেলায় সংক্রমণ বাড়ায় সরকারকে দুষলেন ফখরুল

সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়তার কারণেই’ দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসের বিস্তার উদ্বেগজনক রূপ পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2021, 11:31 AM
Updated : 11 June 2021, 11:31 AM

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দেখেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় যে করোনা ছড়াবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। আমরা চিৎকার করে বলেছি, চিৎকার করে বলেছি। কোথাও কোনো ব্যবস্থা করে নাই।

“আমার ঠাকুগাঁও জেলার হাসপাতালে কোনো আইসিইউই নাই। আপনার অক্সিজেন নাই। আজকেও পত্রিকায় ছবি বেরিয়েছে রাজশাহীতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে সবাই হাঁসফাঁস হাঁসফাঁস করছে।”

ফখরুল বলেন, “ভারতে, পশ্চিমবঙ্গে এগুলো হচ্ছে- এই অবস্থা তো আমরা দেখেছি। তারপরেও সম্বিত ফিরে পায় না। ইউ আর প্রোটেক্টিং দোজ পিপলস। ওই চোরগুলোকে, ডাকাতগুলোকে আমরা প্রোটেক্ট করতেছি- দি ইজ ভ্যারি আনফরচুনেট।”

বাংলাদেশের মানুষের এখন কোথাও ‘দাঁড়াবার জায়গা নেই’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোথাও গিয়ে যে আশ্রয় পাবে, একটি রিলিফ পাবে, কোথাও সে জায়গা নেই।

“রাষ্ট্র যখন নিপীড়নকারী হয়ে যায়, রাষ্ট্র যখন নির্যাতনকারী হয়ে যায়, রাষ্ট্র যখন আপনাকে ডিনাই করে আপনার লাইফগুলো থেকে, এমনকি ন্যায়বিচার থেকে, তখন আপনার যাওয়ার জায়গাটা কোথায় থাকে?”

বাংলাদেশকে ‘সুপরিকিল্প, সুচিন্তিতভাবে একটা অকার্য্কর রাষ্ট্রে’ পরিণত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “এখানে কোনো সুশাসন থাকবে না, এখানে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না, আমাদের সংবিধানে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। ওদিকে নিয়ে চলেছে রাষ্ট্রকে আজকে যারা ক্ষমতায় আছে তারা।”

আইনের শাসনের কথা বলে সরকার আইনকে ‘পুরোপুরিভাবে ধবংস করে দিচ্ছে’ বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তার ব্যাপারে হঠাৎ করে একটা মিথ্যা অডিও ক্লিপ ছাড়া হয়েছে। আপনারা ভালো করেই জানেন যে কোনো জিনিস তৈরি করা কোনো কঠিন কাজ না। সেটা তারা (সরকার) করে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করল। তারপর রিমান্ডে নিয়ে গেল। সেই রিমান্ড আর শেষ হয় না…।”

কারাগারে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, “আসলাম চৌধুরী কী অপরাধ? যেটা দেখতে পাই ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করে নাই। তাই বলে তাকে ৫ বছর জেলে রাখা হয়েছে। বিচার তো হচ্ছে, বিচার হবে।”

পুত্রবধূ নিপুণের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “নিপুণের ভবিষ্যতটা যদি মুশতাকের (কারাগারে মারা যাওয়া কার্টুনিস্ট মুশতাক আহমেদ) মত হয়- আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। সেখানে (জেলে) ডাক্তার আছেন, এরা বলবেন, তার স্বাভাবিক মৃত্যু।

“আমি তাকে আমার কর্মীর মতই মনে করি। আই ফিল প্রাউড, তার মতো কর্মীই দরকার। আর সে যদি দেশের জন্য জীবন দেয়, মুশতাকের মত ভাগ্য বরণ করে, তাহলে আমি চোখের জল ফেলব না।”

নিপুণ রায় চৌধুরীর বাবা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, “আমার মেয়ে জেলখানায় অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে আছে। তার জন্ডিস হয়েছে, সেটাও আমাদেরকে জানানো হয়নি। তার সাথে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হয় না, কথা বলতে পারি না।

“এই যদি হয় আমাদের দেশের অবস্থা, আমরা কোথায় যাব? আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যার হাত ধরে নিপুণ রাজনীতিতে এসেছে, তার সাথেও এরকম অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই, আমরা তাদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।”

সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের পুরস্কৃত করার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “পত্রিকায় দেখলাম পুলিশকে নির্বাচনী পদক দিচ্ছে। ২০১৮, ২০১৪ ও ২০০৮ সালের জন্য। কারণ কী? কোনো দিন শুনিনি এই পৃথিবীতে যে, নির্বাচন করার জন্য পুলিশকে পদক দেওয়া হয়।

“একটাই কারণ যে, তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়েছে। সেজন্যই এসপি সাহেবরা বলেন, দেশটা আমরা চালাই। পুলিশের কনস্টেবল বলে, মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, নিপুণ রায় চৌধুরীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারও বক্তব্য দেন।

অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রিয়াজ উদ্দিন নসু, তাইফুল ইসলাম টিপু, শেখ রবিউল আলম, শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।