‘বিএনপি হয়ত বজ্রপাতের দায়ও’ সরকারকে দেবে: ওবায়দুল কাদের

বিএনপি নেতারা সবকিছুতে কেবল ক্ষমতাসীনদের ‘দোষ  দেখেন’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বজ্রপাতে মৃত্যুর জন্যও হয়ত তারা একদিন ‘সরকারকে দায়ী করতে’ পারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2021, 08:36 AM
Updated : 8 June 2021, 08:36 AM

মঙ্গলবার রাজধানীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে করোনাভাইরাসের সুরক্ষার সামগ্রী বিতরণের এক অনুষ্ঠানে তার এ মন্তব্য আসে।

কাদের বলেন, “বিএনপি সবকিছুতে সরকারের দোষ খোঁজে। আমি মাঝে মাঝে ভাবি বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তারা আবার নাকি বলে যে আওয়ামী লীগই দায়ী। কখন আবার বজ্রপাতে মৃত্যুর জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে দায়ী করে। সেটাই আমি ভাবছি।”

এমন ধারণা মনে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “ঘূর্ণিঝড় আসার সময় বলেছিল, সরকারের জন্য ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। বস্তিতে আগুন লেগেছে, সেটার জন্যও আওয়ামী লীগকে দায়ী করে। আমরা আগুন লাগিয়ে মানুষের দুর্ভোগের সৃষ্টি কেন করব? আগুন সন্ত্রাসতো তাদের ব্যাপার।” 

বিএনপি আসন্ন উপনির্বাচনগুলো বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ১০১৪-২০১৫ সালের মত আবারও ‘জ্বালাও-পোড়াওয়ের’ আন্দোলনে যাচ্ছে কি না- সেই প্রশ্ন তোলেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “বিএনপি উপ-নির্বাচন বয়কট করে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। তারা আবারও আগুন সন্ত্রাসের পথে হাঁটছে। আন্দোলনের নামে সহিংস কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে আওয়ামী লীগ রাজপথে সমুচিত জবাব দেবে।”

গত এক যুগে বিএনপি যে সকারবিরোধী আন্দোলনে সাফল্যের মুখ দেখেনি, সে কথা তুলে ধরে দলটির নেতাদের কটাক্ষও করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “বিএনপি মহাসচিব এখন আবার নতুন করে আন্দোলনের হাঁকডাক শুরু করেছেন। এখন আন্দোলনটা কোন বছর হবে? দেখতে দেখতে ১২ বছর, আন্দোলন হবে কোন বছর? একবার বলে এসএসসি পরীক্ষা, আবার বলে এইচএসসি পরীক্ষার পরে। আবার বলে রোজার ঈদের পরে কিংবা কোরবানির ঈদের পরে। কত ঈদ ও পরীক্ষা চলে গেল, কিন্তু বিএনপির আন্দোলনতো চোখে পড়েনি।

“এখন আবার বলে গণঅভ্যুত্থান  করবে। এই দেশে ৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, পরে গণআন্দোলন হয়েছে। তারা ৬৯ এর পর আবার গণঅভ্যুত্থান দেখাবে, ১২ বছর ধরে দেখাচ্ছে। কখন দেখব আল্লাহ মাবুদ জানে।”

করোনাভাইরাস মহামারী সামলাতে সরকারের সমালোচনার জবাবে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “করোনাভাইরাসের বিষয়ে সরকারের সচেতনা এবং সতর্কতা নিয়ে যারা প্রশ্ন করেন, তারা বিরোধিতার খাতিরেই বিরোধিতা করেন। বাজেটও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই প্রণোদনা প্যাকেজগুলো দেওয়া হল। এই টাকা কোথা থেকে আসছে? এটা কি বিরোধী দল দিচ্ছে? এটাতো সরকারি কোষাগার থেকে জনগণকে দিচ্ছে সরকারই।

“আমরা প্রথম ঢেউ অতিক্রম করেছি, দ্বিতীয় ঢেউও অতিক্রম করতে চলেছি। জীবন ও জীবিকার সমন্বয় করে সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। এতে একজন মানুষও অনাহারে মারা গেছেন বলে আমাদের জানা নাই।”

সরকার অন্যান্য দেশের তুলনায় ‘সফলভাবে’ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে দাবি করে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, “এটা বিএনপিকে আর কত চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে? তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না। তারা কানে লাগিয়েছে তুলো। কিছুই শুনতে পায় না। তাদের চোখে ঠুলি। চোখেও দেখতে পায় না। ভালো কিছু তাদের চোখে পড়ে না। শুধু সমালোচনার জন্য দিনরাত বিষোদগার করছে।”

করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “প্রাণহানী বাড়ছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতি স্টেবল- এ কথা বলা যায় না। সংক্রমণ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। … আসলে করোনা আনপ্রেডিক্টেবল। কখন যে কোন দিকে মোড় নেবে বলা মুশকিল। কাজেই আমাদের সবসময়ই সতর্ক থাকতে হবে।”

ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা দিতে না পারায় সরকার অন্যান্য দেশ থেকে ‘সময়মতো’ টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সরকারের সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিরোধী দল টিকা নিয়ে যেরকম সঙ্কট সৃষ্টির কথা বলে আসছে, বাস্তবে তেমন কিছু ‘হবে না’।

“রাজশাহীতে করোনা পরিস্থিতি খারাপ রূপ নিয়েছে। সেখানে হাসপাতালে অক্সিজেনের এবং বেডের কিছুটা সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সরকার সেটা সরবারাহ করছে। ভারতে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, সেই অবস্থা তো এখনও আমাদের সৃষ্টি হয় নাই। কারণ প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। তিনি ঝড়ের সময়ও যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। করোনা আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে, এটা তার মাথায় আছে। এই জন্য তিনি সব বিষয়ে যথাযথ নজর রাখছেন এবং ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যেসব জায়গায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে আঞ্চলিক লকডাউন দিচ্ছেন।”

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সভাপতিত্বে দলের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক রোকেয়া সুলতানা, কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।