‘সময়’ হলেই ডাক দেওয়া হবে: ফখরুল

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে জোরদার আন্দোলনের জন্য সময়ের অপেক্ষা করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2021, 11:55 AM
Updated : 7 June 2021, 12:12 PM

এই আন্দোলনের সফলতার জন্য তরুণ প্রজন্মের উপর নির্ভর করছেন তিনি। এজন্য নবীনদের সংগঠিত করার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, সময় হলেই সেই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব।

পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “অনেকে বলেন, বিএনপি ডাক দিচ্ছে না কেন? বিএনপি তখনই ডাক দেবে, যখন বিএনপি মনে করবে যে ডাক দেওয়ার সময় হয়েছে।”

নিকট অতীতে আন্দোলনের ব্যর্থ হওয়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “ডাক দিয়েছে তো অতীতেও। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে আমরা প্রায় ৬ মাস অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলিনি? একেবারে গ্রামে-গঞ্জে হাট বাজার পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়নি?

“২০১৫ সালে ম্যাডাম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ হলেন, আমরা সবাই কারাগারে চলে গেছি। তখন গোটা বাংলাদেশে অবরোধ ছিল না? তারপরও কিন্তু হয়নি।”

বিশ্বের নানা দেশের উদাহরণ টেনে ফখরুল বলেন, “আজকে বার্মাতে (মিয়ানমার) ১২শ ছাত্র-ছাত্রীকে গুলি করে মেরে ফেলল। সরাতে পেরেছে জান্তাকে? পারেনি। মিসরে আন্দোলন করে ইসলামী ব্রাদারহুডের মোহাম্মদ মুরসির সরকার গঠিত হল, একটা বছরও টিকতে পারেনি। পরিবর্তনগুলো আপনাদের বুঝতে হবে।”

খালেদা জিয়াকে ‘আন্দোলনের প্রাণশক্তি’ অভিহিত করে বিএনপি মহআসচিব বলেন, “তিনি হচ্ছেন সেই ব্যাবিলনের বংশীবাদক, যার বাঁশি না বাজলে মানুষ বের হয়ে আসে না।”

এই কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার উপর আগে জোর দিচ্ছেন ফখরুল।

“তাকে মুক্ত করতে হবে এবং ৮ হাজার মাইল দূরে থেকে যিনি আমাদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ধেকে সরানোর আশা প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, “এই কাজটি আমাদেরকে করতে হবে। অন্য কেউ করে দিয়ে যাবে না।

“আমেরিকানরা করে দিয়ে যাবে না, চীন করে দিয়ে যাবে না, ভারত করে দিয়ে যাবে না। বাংলাদেশের মানুষকে এটা করতে হবে এবং এর নেতৃত্ব অবশ্যই বিএনপিকে দিতে হবে।”

সেই আন্দোলনে নবীনদের উপর ভরসা রেখে তিনি বলেন, “রাজপথে গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরাজিত হবে। গণঅভ্যুত্থান কারা তৈরি করবে? ইট ইজ দ্য ইয়াং জেনারেশন। তারাই পারবে। যে কোনো পরিবর্তনে তাদেরকেই সামনে আসতে হবে।”

রাজপথে তরুণদের আরও সাহসী ভূমিকা প্রত্যাশা করে ফখরুল বলেন, “আমাদের অনেক বয়স, আমার বয়স ৭২ পার হয়ে গেছে। তারপরেও তো আমি রাস্তায় এসে দাঁড়াই। যেদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাজকে (ছাত্রদল নেতা) আমার বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, সেদিন কজন আপনারা ঘুরে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বলেন তো?”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ডা্কসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানকে দেখিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা যখন যুবক ছিলেন, নব্বইয়ে এরশাদকে আপনারা হটিয়ে দিয়েছিলেন।

“আজকেও এই যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে সংগঠিত হতে হবে, তাদেরকে তৈরি করতে হবে। সেই কাজ শুরু করুন, তাহলে দেখবেন সেই কাজটা (আন্দোলন) সহজ হয়ে যাবে।”

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ৬৯ সালের ১১ দফা আন্দোলন, ৭০ সালের নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের ভূমিকাও তুলে ধরেন তখনকার ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ফখরুল।

তিনি একইসঙ্গে বলেন, “একটা কথা আমাদের বোঝা উচিত যে, নব্বইয়ের পৃথিবী আর  আজকে দুই হাজার একুশের পৃথিবী কিন্তু এক নয়। সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। পরিবর্তনের ধারাকে নিয়ে আমাদের এগুতে হবে। তা না হলে আমরা কখনও সাকসেসফুল হতে পারব না।”

‘তথ্য-উপাত্ত নিয়েও নৈরাজ্য’

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকের পত্রিকায় এসেছে যে, গতকাল সংসদে ওদের একজন সদস্য বলেছেন যে, বড় চোরদের দুর্নীতিতে মাথা হেঁট হয়ে যায়। মানে ওরা ছোট চোর।

“অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্ বলেছেন, এখন তথ্য-উপাত্ত নিয়েও নৈরাজ্য চলছে। আপনি দেখেন না, একটা পরিসংখ্যানও ঠিক নাই। একটা রিপোর্ট ঠিক আছে- টাকা কত পাচার হচ্ছে, সেগুলো ঠিক আছে। বাড়ি হচ্ছে কানাডায়, বাড়ি হচ্ছে মালয়েশিয়াতে, বাড়ি হচ্ছে সৌদি আরবে, বাড়ি তৈরি হচ্ছে লন্ডনে। শপিং মল তৈরি হচ্ছে। কেউ আর দেশে টাকা রাখে না। কারণ জানে যে, এখান সময় আসবে যখন প্রত্যেকটার হিসাব নেবে। মানুষ হিসাব নেবে অবশ্যই।”

কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তাদের (সরকার) একটাই লক্ষ্য খালি দুর্নীতি করবে, খালি চুরি করবে। যেখানে যাক চুরি চুরি। টেস্টের মধ্যে চুরি, সার্টিফিকেট দেবে সেখানেও চুরি, মাস্ক কিনবে সেখানেও চুরি, পিপি করবে সেখানেও চুরি।

“মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যিনি উপস্থিত থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদের সঙ্গে চুক্তি করলেন। সাহেদকে জেলে নিলে মন্ত্রীকে নিলেন না কেন? মন্ত্রীর চাকরিটা গেল না কেন?”

ড্যাব সভাপতি হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, ড্যাবের মহাসচিব আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ হাসান, মেহেদী হাসান, জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিরাজুল ইসলাম, কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন, জাহানারা সিদ্দিকী, সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, মাসুদ আদনান, মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, এমটাবের বিপ্লব উজ্জামান বক্তব্য রাখেন।