শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পথ নির্দেশনা চায় বাম ছাত্র সংগঠনগুলো

মহামারীকালে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা নিরসনে পথ নির্দেশনা ঘোষণা করে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2021, 04:00 PM
Updated : 29 May 2021, 04:00 PM

শনিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্রুত টিকা নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যবিমা চালুর দাবিও জানান তারা।

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে একটা সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়বে।

“এদেরকে কীভাবে শিক্ষাকার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা যায় এবং মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো কীভাবে কখন নেওয়া হবে, তার রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে সেশনজট তৈরি হয়েছে, তা কীভাবে নিরসন করা হবে, তার রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।”

স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে দ্রুত হল খোলার দাবিও জানান তিনি।

সঙ্কট নিরসনে এবার বাজেটে শিক্ষাখাতকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি বলেন, “এবারও যদি প্রযুক্তি খাতকে শিক্ষা খাতের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব আমরা।”

মহামারীর কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বন্ধ। পরিস্থিতি ‘খুব বেশি প্রতিকূল না হলে’ আগামী ১৩ জুন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে শনিবার এক আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমার কাছে প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে বার্তা আসে, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবেন না, এমন বার্তাই বেশি আসে।

“নানা জায়গা থেকে শোনা যাচ্ছে আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু আন্দোলনের জন্য আমরা জনগণকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেই ক্যাম্পাস খোলা হবে।”

শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, “এদিকে পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখছি, অভিভাবকদের কী পরিমাণ উদ্বিগ্নতা। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত, ইন্টারনেট, অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে, মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এবং বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে সমস্যা সৃষ্টি হবে, তার সম্ভাব্য কোনো সমাধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করেনি, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারগুলোর এমন অবস্থা যে, সেখানে কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে তাকে ভর্তি করানো সম্ভব নয়।”

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন বলেন, “সরকার ছাত্র আন্দোলনকে ভয় পায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে এই সরকারের মসনদ বেশি দিন টিকবে না৷ অধিকার আদায়ের জন্য জনগণ ফুঁসে উঠবে, তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।”

ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি ইকবাল কবীর, ছাত্র ফেডারেশনের(একাংশ) সভাপতি মিতু সরকার,

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, ছাত্র যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক তাওসিফা প্রিয়া, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রিপন জ্যোতি চাকমা বক্তব্য দেন।