সত্যিকারের ঈদ তো ‘এক যুগ ধরেই নেই’: ফখরুল

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার যে ঈদ এসেছে, তাকে ‘কষ্ট আর দুঃসময়ের’ঈদ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2021, 09:55 AM
Updated : 14 May 2021, 09:55 AM

তার ভাষায়, ঈদ বলতে যা বোঝায়, সেই আনন্দের ঈদ গত ‘এক যুগ ধরেই’ তাদের হয় না।

শুক্রবার ঈদের নামাজ শেষে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলছিলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “আজকে ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে- অত্যন্ত একটা কষ্টের মধ্য দিয়ে, দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে। একদিকে কোভিড করোনার ভয়াবহ আক্রমণ, অন্যদিকে ফ্যাসিবাদী সরকারের অত্যাচার- নির্যাতন-নিপীড়ন।

“এই দুই দানবের হাত থেকে এই দেশ যেন রক্ষা পায়, জনগণ যেন রক্ষা পায়, সেই দোয়া আমরা আল্লাহর কাছে করেছি।”

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দলের প্রতিষ্ঠাতার কবর জিয়ারত ছাড়া ঈদের দিন আর কোনো কর্মসূচি বিএনপি এবার রাখেনি।

আগের দুই বছর কারাগারে কাটানো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবার হাসপাতালে। তাকে রেখে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঈদ কেমন কাটছে- সেই প্রশ্ন ফখরুলের সামনে রেখেছিলেন একজন সাংবাদিক।

উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ঈদ বলতে আমরা যেটা সবসময় বুঝি, সেই ঈদ আমাদের শুধু তিন বছর নয়, সত্যি কথা বলতে গত এক যুগ ধরেই আমাদের ঈদ নেই।

“কারণ আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা মিথ্যা মামলা দেওয়া-এমন একটা অবস্থায় পৌঁছেছে…, এই দেশে আমাদের কমপক্ষে ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মী আসামি হয়ে আছেন। যারা আসামি হন, তাদের পরিবারে কখনো ঈদ আসে না। এটা বাস্তবতা।”

সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ‘বর্ণনাতীত অত্যাচার-নির্যাতন’ চালাচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন আমাদের সাথে থাকেন তখন উজ্জীবিত হই, তিনি অনুপ্রাণিত করেন।

“তিনি কারাগারে তিন বছর। এখন এটা ভেবে আমরা অনুপ্রাণিত হই যে, তিনি তো আছেন, বেঁচে আছেন।… এই অনুপ্রেরণা নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব- এটাই আমাদের আজকের দিনের শপথ।”

লকডাউন নিয়ে ‘ভুল নীতি’

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, মহামারী ঠেকাতে সরকারের যে বিধিনিষেধের নীতি, তাতে ‘ভুল’ আছে।

“আপনি দেখেছেন যে, সরকারের ভুল নীতির কারণে আজকে কীভাবে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে গেছে। এমনকি বাড়ি যাওয়ার পথে ইতোমধ্যে ৫ জন (ফেরিতে) নিহত হয়েছে।

“অন্যদিকে দেখুন যে, তাদের (সরকার) ভুল সিদ্ধান্তের কারণে একদিকে তারা বলছে লকডাউন, কিন্তু কোনো লকডাউন পালন হচ্ছে না। গণপরিবহন বন্ধ করেছেন, কিন্ত ‍বন্ধ হচ্ছে না।”

সরকার পরিকল্পনাগুলো ‘সঠিকভাবে’ সাজালে এমন পরিস্থিতি হত না বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আমরা বার বার করে বলছি, প্রণোদনার যে টাকা, তা যদি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাত, তাহলে এই অবস্থা হত না। সাধারণ মানুষ সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রণোদনা বা কোনো সাহায্য পায়নি- এটা বাস্তবতা।”

বাজেটে ‘মেগা প্রজেক্টের’ জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়, তার ‘একটি বড় অংশ’ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে সরকারকে পরামর্শ দেন ফখরুল।

খালেদা জিয়ার ‘ঈদ মোবারক’

ফখরুল সাংবাদিকদের জানান, ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছে জানিয়েছেন।

“দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে, জনগণকে ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক জানিয়েছেন। তিনি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি শুধু নিজের জন্য নয়, সারাদেশের মানুষের জন্য দোয়া চেয়েছেন।

“দেশনেত্রী যেন সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেন, সেজন্য আমরাও আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছি।”  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বেলা সাড়ে ১১টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে আসেন। সেখানে তারা ফাতেহা পাঠ করে মোনাজাতে অংশ নেন।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সও তাদের সঙ্গে ছিলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঈদের দিন দলীয় কর্মসূচি শেষ করে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতেন। ২০১৮ সালে দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে তিনি কারাগারে গেলে দলের নেতারা সেই রেওয়াজ ধরে রাখেন।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানসহ মহানগর বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও ঈদের দিন তাদের প্রয়াত নেতার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।