সাবেক জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাক এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা

জামায়াতে ইসলামী থেকে তিন বছর আগে পদত্যাগ করা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান উপদেষ্টা করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিল দলটির ‘সংস্কারপন্থি’সাবেক নেতাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ (এবি পার্টি)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2021, 08:01 PM
Updated : 2 May 2021, 08:03 PM

রোববার প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিজয় নগরে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সংগঠনের সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু এই ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অনেক দিন থেকে এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের সাথে কাজ করছেন। আজকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করছি।”

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের সেই ভূমিকা নিয়ে ‘ভিন্নমত পোষণ করা’ একদল নেতাকর্মী ২০১৯ সালে বেরিয়ে এসে প্রথমে ‘জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন মঞ্চ গঠন করেন। পরে তা নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’-এবি পার্টি নামে আত্মপ্রকাশ করে ২০২০ সালের ২ মে।

জামায়াত থেকে পদত্যাগকারী সাবেক সচিব আবু সোলায়মান চৌধুরীকে পার্টির আহ্বায়ক এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জুকে সদস্য সচিব করা হয়।

পার্টির পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, “একাত্তর সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় আমাদের জাতীয় ঐক্যের অন্যতম পাটাতন। এবি পার্টি সেই পাটাতনকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে বদ্ধ পরিকর।”

তবে এটা সঙ্কটে পড়া জামায়াতের ‘টিকে থাকার কৌশল’ কি না, সেই সন্দেহ সে সময় প্রকাশ করেছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সক্রিয় রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ।

এবি পার্টি প্রতিষ্ঠার আগে ২০১৮ সালে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়ে জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা দেন।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের আইনজীবী দলের নেতৃত্ব দেওয়া রাজ্জাক ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তার ধারণ করা বক্তব্য প্রচার করা হয়।

সেখানে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের যে প্রতিশ্রুতি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে দেওয়া হয়েছে, জনগণের জন্য তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারের মাধ্যমে এবি পার্টির যাত্রা শুরু।”

এবি পার্টিকে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ‘নিরলস সংগ্রাম’ চালিয়ে যেতে হবে মন্তব্য করে তিনি দলের ভেতরেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।

এবি পার্টির আহবায়ক সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সদস্য সচিব মঞ্জু অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন।

গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ড. রেজা কিবরিয়া, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ড. দিলারা চৌধুরী, কলামিস্ট গৌতম দাস, সাবেক ছাত্র নেতা গোলাম সারোয়ার মিলন, সাবেক সাংসদ নিলোফার চৌধুরী মনি, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়ার ধারণ করা বক্তব্যও প্রচার করা হয় ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে।

জামায়াতে ইসলামীর সূচনা হয় উপমহাদেশের বিতর্কিত ধর্মীয় রাজনীতিক আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালের ২৬ অগাস্ট, তখন এর নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ।

পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরোধিতা করায় ১৯৬৪ সালে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলেও পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন ১১ দফাসহ বিভিন্ন দাবির বিরোধিতা করে জামায়াত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত ও এর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ।

সে সময় তারা সারা দেশে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মত যুদ্ধাপরাধ ঘটায়। সেই অপরাধে সর্বোচ্চ আদালতে এ পর্যন্ত জামায়াতের সাত শীর্ষ নেতার সাজা হয়েছে, তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের পর স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের মতো ধর্মাশ্রয়ী দলগুলো নিষিদ্ধ হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তাদের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করে দেন। আর জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে যুদ্ধাপরাধী দুই জামায়াত নেতাকে দেন মন্ত্রিত্ব।

একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করে আদালতের একটি রায়ে বলা হয়, দেশের কোনো সংস্থার শীর্ষ পদে স্বাধীনতাবিরোধীদের থাকা উচিত নয়।

শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশ নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে। ব্যক্তির পাশাপাশি দল হিসেবে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আইনি কাঠামো তৈরির কাজ করছে সরকার।