কোভিডে মৃত্যু: সব শ্রমিকের জন্য ব্যাংককর্মীদের মত ক্ষতিপূরণ চান নজরুল

করোনাভাইরাসে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে যে অংকের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হয়েছে, দেশের সকল শ্রেণির শ্রমিকের জন্য তা চালু করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2021, 08:53 AM
Updated : 1 May 2021, 08:53 AM

শনিবার মে দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, “আমরা সম্প্রতি দেখলাম যে, আমাদের ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিয়ম হয়েছে, কোভিডে মারা গেলে একটা পরিমাণ নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যে তারা ক্ষতিপূরণ পাবে। আমরা খুশি হয়েছি যে অন্তত একটা প্রতিষ্ঠানে এরকম একটা আইন, একটা নিয়ম করা হয়েছে।

“কিন্তু যারা মূল উৎপাদনশীল শ্রমিক, যারা বেশি পরিশ্রম করে, যারা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে, সেইসব শ্রমজীবী মানুষের জন্যও একই নিয়ম হবে না কেন? কেন সাংবাদিক বন্ধুদের জন্য একই নিয়ম হবে না, কেন আমার পুলিশ ভাইদের জন্য একই নিয়ম হবে না?”

করোনাভাইরাসে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আক্রান্ত হলে যে বীমা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তা প্রত্যাহার করে গত মাসে শুধু মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদবী অনুযায়ী তিনটি ধাপে ফেলে তাদের পরিবারকে ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয় সেখানে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, “যদি ৫০ লক্ষ টাকা পায়, ২৫ লক্ষ টাকা পায় কোভিডে মারা গেলে, অন্যরা কেন কম পাবে কিংবা পাবে না। স্বাধীন রাষ্ট্রে এ ব্যাপারে নানারকম নিয়ম থাকবে কেন? বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠান তার অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যা উচিত মনে করে, রাষ্ট্র সারাদেশের শ্রমিকদের জন্য তা উচিত মনে করবে না কেন?

“আজকে এই মে দিবসের সমাবেশ থেকে দাবি করছি, সব শ্রেণির শ্রমিকদের জন্য কোভিডে আক্রান্ত হলে তাদের সুচিকিৎসা এবং মারা গেলে তাদের জন্য ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যে নিয়ম করা হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।”

করোনাভাইরাস মহামারীর এই সঙ্কটের দিনে শ্রমিকদের জন্য ‘রেশন’ চালুর দাবিও জানান এই বিএনপি নেতা।

“আমরা শ্রমিকদের জন্য রেশন দাবি করেছিলাম। এটা নতুন কোনো দাবি নয়, ব্রিটিশ আমল থেকে আছে। আমরা নিজেরা যেসব কারখানায় চাকরি করেছি, সেসব কারখানায় রেশন শপ ছিল, ন্যায্যমূল্যের দোকান ছিল।

“সব সময় যদি নাও হয়, করোনার মতো দুযোর্গকালে শ্রমজীবী মানুষের জন্য রেশন ও ন্যায্যমূল্যের দোকান করা উচিত, যাতে করে তারা তাদের সীমিত আয়ের মধ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করতে পারে।”

শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদকে এই দাবি আদায়ে ‘প্রয়োজনীয় উদ্যোগ’ নেওয়ার আহ্বান জানান নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, “শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদে আমরা সবাই আছি, আমরা শ্রমিক দল আছি, জাতীয় শ্রমিক লীগ আছে, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র- বহু সংগঠন আছে। আমরা সবাই মিলে একই দাবিতে আন্দোলন করতে পারি, আমরা অতীতে করেছি।”

নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, “কোভিড চলছে, এই সময়ে মানুষ অনেক কষ্টে আছে, শ্রমিকরা কষ্টে আছে, বিভিন্ন পেশার মানুষরা কষ্টে আছে। এই সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কথা বলছি না। আমরা বলছি, এই কোভিডেও সবার প্রতি সমান আচরণ, সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, রাষ্ট্রকে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টার কাজের স্বীকৃতি, তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের নিশ্চয়তার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘নিঃশর্ত মুক্তির’ দাবিও মে দিবসের এই সমাবেশ থেকে জানান নজরুল ইসলাম খান।

শ্রমিক দলের বিভিন্ন ইউনিট ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশে অংশ নেয়।

সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শ্রম বিষয়ক সহ সম্পাদক ফিরোজ-উজ-জামান মোল্লা, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মিয়া মিজানুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, সুমন ভুঁইয়া, আমীর খসরু, মিরাজ হোসেন, খন্দকার জুলফিকার মতিন বক্তব্য দেন।

পরে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রা করে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সমাবেশে অংশ নেন।