খালেদার অবস্থা ‘স্থিতিশীল’, ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন

হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2021, 04:01 PM
Updated : 28 April 2021, 04:18 PM

বুধবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানান।

বসুন্ধরায় এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা ‘স্থিতিশীল’আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘উনার (খালেদা জিয়া) যে চিকিৎসা বাসায় চলছিল, সেটিসহ আরো কিছু নতুন ওষুধ যুক্ত করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আলহামদুল্লিলাহ উনি এখন স্টেবল।“

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল খালেদাকে। কিছু পরীক্ষা করার পর রাত ১২টার দিকে তাকে ভর্তি করা হয়।

মঙ্গলবার রাতে তার সিটি স্ক্যান (চেস্ট), ইসিজি, ইকোসহ হৃদরোগের পরীক্ষাগুলো করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার।

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “আজকে একটি মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে। এভার কেয়ার হাসপাতালের ৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। এতে ম্যাডামের ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, আমি এবং অধ্যাপক মো. আল মামুন আজকে ছিলেন। বোর্ড আগের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো রিভিউ করেছে। এরপর আরো কিছু পরীক্ষার সুপারিশ করেছে।

“পরীক্ষাগুলো আজকে অথবা কালকে হবে। সেগুলোর রিভিউ করে ম্যাডামের সার্বিক চিকিৎসার প্ল্যানিং সম্পন্ন হবে।”

তিনি আরো বলেন, ‘‘গত ১৫ এপ্রিল ম্যাডামের সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেখে ফুসফুসে ‘মিনিমাম ইনভোলবমেন্টের’ কথা বলেছিলাম। গতকাল চেস্টে যে সিটি স্ক্যান হয়েছে, সেখানে বিন্দুমাত্র ‘ইনভোলবমেন্ট’নেই। এটা ভালো দিক।

“উনার হৃদযন্ত্রেও কোনো ধরনের কার্ডিও সমস্যা নেই। কালকে যে পরীক্ষা করা হয়েছে সেগুলোর রিপোর্টেও নেই।”

খালেদা জিয়া ‘নন কোভিড’ ইউনিটে

অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘উনার করোনাভাইরাসের উপসর্গ নেই। উনি কিন্তু এখন নন কোভিড ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। আন্তর্জাতিক চিকিৎসার নিয়ম আছে দুই সপ্তাহ পরে রোগীর কোনো উপসর্গ না থাকলে করোনাভাইরাসের টেস্ট করানোই প্রয়োজন নেই। তখন ধরে নিতে হবে উনার কাছ থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সুযোগ নেই।”

খালেদা জিয়া কবে বাসায় ফিরবেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বাসায় ফেরার বিষয়টা প্রেডিক্ট করাটা খুব টাফ। উনার পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হলে বোর্ড রিভিউ করবে। আশা করতে পারি খুব শিগগরি উনার বাসায় ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।”

খালেদা জিয়া দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আর্থাটাইটিজ, ডায়াবেটিক, চোখের সমস্যায় ভুগছেন। এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “উনার আধুনিক চিকিৎসার প্রয়োজন, আধুনিক কেন্দ্রের প্রয়োজন। এই সুপারিশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল বোর্ড করেছিল। সেটা যদি আমাদের করতে হয়- পরিবারের সদস্যরা অনেক দিন আগে সরকারের কাছে দরখাস্ত করেছেন- উনাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া উচিত সুচিকিৎসার জন্য। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি সার্বিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলন ডা. মোহাম্মদ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।

গত ১১ এপ্রিল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর খালেদা জিয়া গুলশানে তার ভাড়া বাসা ফিরোজায় ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীর অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ১৪ দিন পর গত শনিবার আবার পরীক্ষা করা হলে তখনও তার করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’আসে।

যেদিন প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে, সেদিনই এভারকেয়ারে নিয়ে খালেদার সিটি স্ক্যান (চেস্ট)’ করানো হয়েছিল। ফুসফুসে সংক্রমণের মাত্রা তখন খুব সামান্য থাকায় বাসায় রেখেই তার চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত হয় সে সময়।

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে কারাগারে যেতে হয়েছিল ৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে।

দেশে মহামারী শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। পরে দুই দফা তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

তখন থেকে গুলশানের বাসাতেই থাকছেন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে বাইরের লোকজনের যোগাযোগ সীমিত।

আরও পড়ুন