সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে টিকাবঞ্চিত জনগণ: বিএনপি

সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জনগণ টিকাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2021, 11:16 AM
Updated : 26 April 2021, 11:30 AM

সোমবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “আজকে এতো বড় একটা বৈর্শ্বিক মহামারী, এতো বড় একটা বিপর্যয়, সেই বিপর্যয়ের মধ্যে সরকার শুধু ভুল সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্তগুলোর পেছনে তাদের আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ফলে জনগণ আজকে টিকা পাচ্ছে না বা আরো ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।

“সেক্ষেত্রে অবশ্যই এটা একটা অপরাধমূলক কাজ। এই অপরাধমূলক কাজের জন্য তাদেরকে (সরকার) বিচারের সম্মুখীন হতে হবে ভবিষ্যতে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, শুধুমাত্র ভারত থেকে টিকার উপর নির্ভরশীল না হয়ে আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভ্যাকসিন সংগ্রহের ব্যবস্থার কথা বিএনপি আগেই বলেছিল, কিন্তু ‘সরকার কর্ণপাত’ করেনি।

“আজকে কী অবস্থা দাঁড়িয়েছে? শুধুমাত্র ভারতের কাছ থেকে একজন ব্যক্তিকে সুবিধা দেওয়ার জন্য সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে ভ্যাকসিনের যে ব্যবস্থা করেছিল, সেই ব্যবস্থা একদম ভেঙে পড়েছে।

“আজকে থেকে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬০ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছেন- এটা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে। প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ করার মানেই হলো টিকা আর নেই।”

তিনি বলেন, “যেখানে সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করে হার্ড ইমিউনিটি আনা প্রয়োজন সেখানে আজকে সরকারের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা, দুর্নীতি এবং তাদের প্রফিট তৈরি করার যে মানসিকতা, সেই সঙ্গে নিজেদের লোকগুলোকে আর্থিকভাবে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে গোটা জাতিকে আজকে বিপদগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে।

“যেটা আমরা মনে করি যে, ক্রিমিনাল অফেন্স এবং এই একটা কারণেই আজকে এই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত এবং তার চলে যাওয়া উচিত।”

চলমান ‘লকডাউনে’ দরিদ্র নিম্ন আয় মানুষজনকে সরকার কোনো সহযোগিতা করেনি অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা অবিলম্বে দুস্থ মানুষ যারা দিন আনে দিন খায় তাদেরকে আর্থিক প্রণোদনার জন্য আহবান জানিয়েছি। আজকে আবারো সেই আহ্বান জানাচ্ছি।”

‘কোভিড মোকাবিলায় সরকার আন্তরিক নয়’

কোভিড মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকারের ‘আন্তরিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই ভ্যাকসিন আনার ক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি করেছেন; একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে যিনি, তাদের সঙ্গে সংযুক্ত তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে, যার ফলে চরম বিপর্য্য় ঘটল।

“অন্য দিকে হাসপাতালগুলোতে যে কাণ্ড-কারখানা হয়েছে, সেই কাণ্ডকারখানাগুলোতে আপনারা জানেন, কীভাবে এগ্রিমেন্ট হয়েছে, কীভাবে ফলস রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় এসেছে ৯৪০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে কয়েকটি হাসপাতালে- এটা তো তাদের চরম ব্যর্থতা।” 

‘লকডাউনের লেজে-গোবরে অবস্থা’

 বিএনপি মহাসচিব বলেন, “লকডাউন পরিস্থিতিকে সরকার লেজে-গোবরে করে ফেলেছে। তারা নিজেরাও জানে না কি করবে, কী করবে না।

“গতবার যেমন পুলিশ বাহিনী, একসময় সামরিক বাহিনীও রাস্তায় নেমেছিল, কনট্রোল করেছিল। দেখুন এবার কিন্তু লকডাউন বাস্তবায়ন করার জন্য পুলিশ বাহিনী ছাড়া আর কেউ নেই। এটা সরকারের চরম ব্যর্থতা “

ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জিডিপির এক দশমিক তিন শতাংশ ব্যয় করছে। আফগানিস্তানের মতো দেশ জিডিপির ২ শতাংশের বেশি ব্যয় করছে। এটাকে কি বলে? এটাকে বলে যে সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই।

“তারা নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করছে, বিভিন্ন দেশে বাইরে বাড়ি-ঘর তৈরি করছে এবং করোনাকালে স্বাস্থ্যখাতে দুই-তিনশ কোটি টাকার মালিক হয়েছে।”

ফেইসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্টের প্রতিবাদ

মির্জা ফখরুল বলেন, “ফেইসবুকে ইদানিং আমার নিজের নামে ‘ফলস-ফেইক’ অ্যাকাউন্ট সৃষ্টি করে বিভিন্ন রকমের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের পরিবার এবং দেশনেত্রী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের নামেও ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে মিথ্যা সংবাদ মিথ্যা প্রচারনা চালানো হয়। আমরা এটার আগেও নিন্দা জানিয়েছি, আজো নিন্দা জানাচ্ছি।

“আমার কাছে মনে হয়, এই বিষয়টার সঙ্গে পুরোপুরিভাবে সরকারের মদদ আছে এবং সরকারের মদদপুষ্ট দুষ্কৃতিকারীরা এই সমস্ত ঘটনা ঘটাচ্ছে।”

খুলনা প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি সাংবাদিক আবু তৈয়ব মুন্সির বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে খুলনার মেয়রের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এই আইনে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।