করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ চান ফখরুল

ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় দেশের স্থল সীমান্ত বন্ধের পাশাপাশি আকাশপথে আসা যাত্রীদের ‘তিনদিনের কোয়ারেন্টিনের’ সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2021, 11:57 AM
Updated : 24 April 2021, 12:17 PM

শনিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব দাবি জানান।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় টেউয়ে দেশের পরিস্থিতি ও করণীয় তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি।

ফখরুল বলেন, ‘‘ভারতের পশ্চিম বাংলায় এই সংক্রমণটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। সেজন্য আমরা মনে করি, ভারতের সঙ্গে স্থল পথের সীমান্তগুলো একেবারেই বন্ধ করা দরকার।”

লকডাউনের সময় বিশেষ ফ্লাইটের যাত্রীদের দেশে আসার পর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘বাইরে থেকে যারা আসবেন বিমানপথে, তাদেরকে মাত্র তিনদিন কোয়ারেন্টিন করতে হবে। যেটা আমি বিশ্বের কোথাও শুনিনি।”

এই সমস্ত সিদ্ধান্ত আমাদের পরিস্থিতিকে ভয়ংকরভাবে নাজুক করে ফেলেছে। এখন যে অবস্থাটা সৃষ্টি হয়েছে, লকডাউনের পরে একটা সপ্তাহ সবাই বাইরে চলে গেল, এখন আবার বলা হচ্ছে, আগামী রোববার থেকে শপিংমল-দোকানপাট খুলে দেয়া হবে। আজকের পত্রিকায় এসেছে যে, যারা এসব দোকানপাটে কাজ করছেন, ছোট ছোট দোকান যারা করেন তারা সবাই বাইরে চলে গিয়েছিল, তারা আবার ফিরতে শুরু করেছেন। ঈদের আগে তারা আবার গ্রামে ফিরে যাবেন। ফলে কী হবে? সারা দেশেই করোনাভাইরাসের সংক্রামণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাবে।”

বাংলাদেশে যে ভেরিয়েন্ট এসেছে তা ভয়াবহভাবে ছড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “এখনো আমরা সরকারকে বলতে চাই, এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার এবং একটা পরিকল্পিত, সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। এত লেজে গোবরে করে ফেলেছে যেন এখন কোনটাই সামাল দিতে পারছে না।”

লকডাউন কার্যকরে সরকার ব্যর্থ দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তার প্রধান কারণ লকডাউনের শর্তানুযায়ী খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খাদ্য এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা না করা। এর কিছুই না করে মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করা রীতিমতো অমানবিক ও অর্থহীন প্রচেষ্টা।”

এমন পরিস্থিতিতে ৭ দফা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার প্রস্তাব করেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে, লকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিকভাতের কর্মীদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ তহবিল থেকে প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য ১৫ হাজার টাকা এককালীন নগদ অর্থ দেয়া, সমগ্র দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ‘সুরক্ষায় সহায়তা’ প্যাকেজের আওতায় আনা, নিরপেক্ষভাবে দুঃস্থ উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করা, ক্ষতিগ্রস্থ এসএমই, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প ও কৃষিখাতে বিশেষ প্রণোদনা বরাদ্দ, রাজনৈতিক বিবেচনা না করে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পোদ্যোক্তা ও প্রবাসীদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ প্রদান, উদ্যোক্তাদের পুঁজির ব্যবস্থা করা।

একই সঙ্গে ২০২০ সালের এপ্রিলে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন খাতের জন্য ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের প্রস্তাব মূল্যায়ন করে দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিও করেন তিনি। তিনি বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণেরও আহ্বান জানান।

প্যাকেজ বাস্তবায়নে সরকারের উদাসীনতা ও আন্তরিকতার অভাব দায়ি অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজের অর্ধেকই পৌঁছায়নি ভুক্তভোগীদের কাছে।

করোনাভাইরাসের টিকা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “টিকা সংগ্রহে স্বেচ্ছাচারিতা ও নতুন অনিশ্চয়তা গোটা জাতিকে হতাশহীন করে ফেলেছে। রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবহার করে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানকে টিকা সরবরাহের একচেটিয়া সুবিধা দিতে গিয়ে আজ সমগ্র জাতিকে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে ভোটারবিহীন দুর্নীতিবাজ এই সরকার।”

একই উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করতে গিয়ে আজকে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম থেকেই ভারতের বিকল্প সূত্র থেকে টিকা কেনার কথা আমরা বারবার বলেছি। যদিও এখন আমরা দেখতে পারছি, শেষ সময় এসে সরকার রাশিয়া ও চীনের সঙ্গ পাওয়ার জন্য গ্রুপ তৈরি করে ভ্যাকসিন সংগ্রহের চিন্তা করছে।”

সংবাদ সম্মেলনে লকডাউনের নামে রাজনৈতিক নিপীড়নের অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “লকডাউনের নামে সরকার মূলত বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারী আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন ঘোষণা করেছে। প্রখ্যাত আলেম-ওলামাসহ বিএনপি ও এর অংগসংগঠনের শত শত নেতা-কর্মীকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে।”

এরকম পরিস্থিতিতে দলের নেতা-কর্মীদের সাধ্য অনুযায়ী ‘দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের’পাশে দাঁড়ানোর আহবানও জানান তিনি।

খাদ্যের মজুদ ‘সবচেয়ে কমে যাওয়ার’ প্রকাশিত সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, “এবার চালের মজুদ কম থাকায় আগে খাদ্য আমদানি করার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। মজুদদাররা মাঠ থেকে চড়া দামে ধান কিনে ফেলছে। সরকার এখনো ধান কেনা শুরু করেনি।

আমরা সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে অবিলম্বে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার আহবান জানাচ্ছি এবং স্বল্প দামে জনগণের কাছে পৌঁছাতে ওএমএস কর্মসূচী দ্রুত বাড়ানোর অনুরোধ করছি।”