করোনাভাইরাস: খালেদার অবস্থা ‘স্থিতিশীল’, সিটি স্ক্যানের সিদ্ধান্ত

নতুন উপসর্গ হিসেবে ‘সামান্য’ জ্বর ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2021, 01:37 PM
Updated : 15 April 2021, 01:37 PM

তাকে হাসপাতালে নেওয়ার দরকার আছে কিনা তা নির্ধারণে দ্রুত ‘সিটি স্ক্যান’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় খালেদা জিয়াকে দেখে আসার পর তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের প্রধান অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের কাছে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসসের অবস্থা তুলে ধরে ডা. সিদ্দিকী বলেন, নতুন উপসর্গ বুধবার রাতে উনার একটু জ্বর উঠেছিলো- ১০০ ডিগ্রির মতো ছিল।

“আজকে সকালেও উনার একবারের মতো একটু জ্বর উঠেছে, ১০০ টাচ করেছে, কিছুক্ষণ জ্বর ছিল।…এই মাত্র উনার চেস্ট পরীক্ষা করেছি। যেহেতু চেস্ট ক্লিয়ার আছে। আমরা মনে করছি, উনি ভালো স্টেবল আছেন।”

তার ডায়াবেটিস ও আর্থরাইটিসের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্লাড সুগার’ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দিনে তিনবার তা ‘মনিটর’ করা হচ্ছে।

“সেই অনুযায়ী আমরা ট্যাবলেট ও ইনস্যুলিন দিয়ে ব্লাড সুগার কনট্রোল করছি। আর্থরাইটিসের জন্য উনার ফিজিওথেরাপি চলছে। আনুসাঙ্গিক যে চিকিৎসাগুলো দরকার, সেগুলোও সবই চলছে।”

আক্রান্ত হওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে খালেদা জিয়া ‘মানসিকভাবেও বেশ স্ট্যাবল’ আছেন জানিয়ে ডা. সিদ্দিকী বলেন, “কোভিডের যত সাবধানতা, যত জটিলতা, সেগুলো সাধারণত ‘সেকেন্ড উইকে’ হয়। সেজন্য আমরা আরেকটু সাবধানতা অবলম্বন করতে চাই।

“উনার সব পরীক্ষা করা হয়েছে। শুধু সিটি স্ক্যানটা করানো হচ্ছিল না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, খুব দ্রুত স্বল্প সময়ের মধ্যেই সিটি স্ক্যানটা করিয়ে ফেলব।

“এছাড়া উনার আর সব যেমন- বায়োক্যামিক্যাল প্যারামিটারস, ফিজিক্যাল স্ট্যাটাস, অক্সিজেন স্যাচুরেশন, অ্যাপেটাইট, পালস, ব্লাড সার্কুলেশন অন্যান্য সব দিকে উনি- আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালো আছে।”

তবে কোন হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করানো হবে তা জানাতে রাজি হননি এই চিকিৎসক।

এফএম সিদ্দিকী বলেন, “কোভিডের ক্ষেত্রে কখনোই আপনি আগে থেকে বলতে পারবেন না কন্ডিশন কেমন হবে। এটা খুব দ্রুত পরিবর্তনশীল একটা রোগ। তবুও আমরা খুব দ্রুত দ্রুত সিটি স্ক্যান করিয়ে ফেলব।

“আমরা যদি সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেখে মনে করি যে, বাসায় রেখে চিকিৎসা করাটা উনার জন্য ভালো হবে তাহলে আমরা বাসায় রাখব। আর সিটি স্ক্যান দেখে যদি মনে করি না আমরা ২/৩ দিনে জন্য বা কয়েকদিনের জন্য উনাকে হাসপাতালে অবজারভেশনে রাখা দরকার- আমরা সেটাও করব। আমাদের ডিসিশনটা নির্ভর করবে সিটি স্ক্যানের রিপোর্টের উপরে।”

লন্ডনে অবস্থারত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা.জোবাইদা রহমানসহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করা হচ্ছে বলে জানান এফএম সিদ্দিকী।

রোববার কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পরপর বিকেলে বিশেষজ্ঞদের এই দল ফিরোজায় এসে খালেদা জিয়াকে দেখেন। চার দিন পর বৃহস্পতিবার তারা তার বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করেন।

চিকিৎসক দলের সদস্য বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুস শাকুর খান, ইউরোলজিস্ট অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহ. আল মামুন এসময় তার পাশে ছিলেন। আরও ছিলেন চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান।

বিকাল ৪টায় চিকিৎসক টিমের সদস্যরা ‘ফিরোজায়’ প্রবেশ করেন। বেরিয়ে আসেন বিকাল ৫টার পর।

‘ফিরোজা’র বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও আরো ৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসাও এখানে চলছে।

৭৫ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়।

তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। তার সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ সীমিত।