যারা জান্তাদের তোষামোদী, তারাই ৭ই মার্চের ভাষণে কিছু পায় না: শেখ হাসিনা

বিএনপির যেসব নেতা জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা পান না, তাদের পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ‘পদলেহনকারী,খোশামোদী তোষামোদীর দল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2021, 02:16 PM
Updated : 8 March 2021, 03:40 PM

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের ৫০ বছর পূর্তিতে সোমবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতায় একথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “যারা এই ভাষণটাকে ছোট করতে চায় বা এই ভাষণটাকে নিয়ে..আমি শুনলাম আমাদের বিএনপির কয়েকজন নেতা এর মধ্যে আছে, যারা হয়ত এক সময় ছাত্রলীগ করেছিল, পরে আবার ছেড়ে চলেও গিয়েছিল, তারা নাকি এই ভাষণে স্বাধীনতার কোনো ঘোষণাই পায় নাই।

“এরা পাবে না। কারণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও পায়নি। তারা অনেক খুঁজেছে। আমার মনে হচ্ছে, এরা যেন সেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদেরই পদলেহনকারী, খোশামোদী, তোষামোদীর দল। কাজেই তারাই যা বোঝে, এরা তাই বোঝে। কিন্তু বাঙালি যা বোঝে, এরা তা বোঝে না। বাংলাদেশের মানুষ যা বোঝে, এরা তা বোঝে না।”

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণের দিনটির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “পাকিস্তানি শাসকদের একটা পরিকল্পনা ছিল। খুব সাজসাজ রব নিয়ে সাঁজোয়া বাহিনী বসে ছিল, সেখানে হেলিকপ্টার, প্লেন রেডি ছিল যে বঙ্গবন্ধু কী ভাষণটা দেন এবং তার উপর তারা মাঠে যারা আছে সবাইকেই উপর থেকে বোম্বিং করে হত্যা করবে। এটা পাকিস্তানি যারা তখন অপারেশন চালাচ্ছিল, তাদের লেখা বইতেও কিন্তু প্রকাশ পায়।”

ওই পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর কৌশলী হওয়ার বিষয়টি তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তো ‘পোয়েট অফ পলিটিক্স’। তিনি জানতেন যে মানুষের কাছে কথাটা কী ভাষায় বললে সাধারণ মানুষ কথাটা বুঝে নেবে, কিন্তু শত্রুদের বুঝতে সময় লাগবে। যে কোনো একটা যুদ্ধে রণকৌশলটা হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই রণকৌশলের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনা এটাই হচ্ছে সেই যুদ্ধে যিনি নেতৃত্ব দেন তার সব থেকে বড় কৃতিত্ব। আর সেটাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব করেছিলেন।”

এই ‘না বোঝাদের’ দলে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খানও ছিলেন, বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ শোনার পর দেশের মানুষ খুশি হয়ে আনন্দে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগান দিতে দিতে বাড়ি ফিরছিল এবং তখন ফুলার রোডে তাকে থামিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে স্লোগানও ধরিয়েছিল।

সেদিন ঘরে ফিরে কয়েকজন ছাত্রনেতাকে দেখার স্মৃতি স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সেখানে সিরাজুল আলম খান তখন বঙ্গবন্ধুকে বলছেন, ‘লিডার আপনি কী বললেন? সব মানুষ হতাশ হয়ে চলে যাচ্ছে’।

“বলার সাথে সাথে আমি বললাম, আপনারা এই রকম মিথ্যা কথা বলছেন কেন? আমি তাকে নিজেই বললাম, আপনি এত মিথ্যা কথা বলেন কেন? আপনারা তো মাঠ থেকে অনেক আগেই চলে এসেছেন। আপনারা তো মাঠের অবস্থা তাহলে জানেন না।”

সেদিন সিরাজুল আলম খানের কথা বিশ্বাস না করতে বাবাকে বলেছিলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আজকে বিএনপির কয়েকজন নেতার বক্তব্য আর ওইদিনের ওই কথা শুনে আমার শুধু মনে হচ্ছে, এরা আসলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কোনো দালালি নিয়েই ছিল। সেদিন যারা এই কথাটা বলেছে আর এরা এখনও সেই দালালি ভুলতে পারেনি।”

৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার বার্তা বিএনপি নেতাদের খুঁজে না পাওয়ার আরেকটা কারণও থাকতে পারে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকা,চট্টগ্রামসহ সারা দেশের মুক্তিকামী মানুষ পাকিস্তানি বাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে ব্যারিকেড দিচ্ছিল, যা ঠেকাচ্ছিল পাকিস্তানি বাহিনী।

শেখ হাসিনা বলেন, “সেদিন যারা রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছিল বিশেষ করে চট্টগ্রামে যারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল, ২৫ মার্চ তাদের উপর যারা গুলি চালিয়েছিল, তার মধ্যে জিয়াউর রহমান একজন।চট্টগ্রামের যারা মুক্তিযোদ্ধা, এই তথ্য তারা জানেন।

“শুধু তাই নয়,জিয়াউর রহমান ২৫, ২৬ এই দুদিন এই হত্যাকাণ্ড চালায়। ২৭ শে মার্চ সে যাচ্ছিল সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে। সেই অস্ত্র যাতে সোয়াত জাহাজ থেকে না নামায় সেখানে কিন্তু আমাদের যারা সংগ্রাম পরিষদের, তারা বাধা দিয়েছিল,সাধারণ জনগণ বাধা দিয়েছিল। এবং সেখানেই জিয়াউর রহমানকে তারা আটকায়।”

শেখ হাসিনা বলেন, “যে জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে, অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আবার দল গঠন করেছে, সেই দলের নেতারা ৭ই মার্চের ভাষণের ভাষা বুঝবে না,মর্ম বুঝবে না, এটা তো খুব স্বাভাবিক। ধরে নিতে হবে যে এরা এখনও সেই পুরনো প্রভুদের ভুলতে পারেনি।”

পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া ও লেখাপড়া করা জিয়াউর রহমান ‘আগাগোড়া পাকিস্তানের দালালি করে এসেছেন’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সে কবে বাংলাদেশি হল?চাকরিসূত্রে এখানে এসেছিল। সেই সূত্রে বিবাহ করে পরবর্তীতে থেকে যায়।

“তারপরও যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, সবাইকে জাতির পিতা সম্মানিত করেছেন। কিন্তু এদের চরিত্র তো বদলায়নি। ঠিকই বেইমানি,মুনাফেকি করেছে। একটা মেজর ছিল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করেছিল।আর সেই এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ছিল এবং ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল।”

বিএনপি নিজেদের স্বার্থে ইতিহাসকে বিকৃত করেছে বলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “ওরা কী বলল, এটা নিয়ে আমাদের কথা বলার দরকার নেই বা এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করারও কিছু নেই। আমরা জনগণের পাশে আছি, জনগণের জন্য আমরা কাজ করি।”

কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে বিএনপি নেতাদের নানা উক্তির কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সেই টিকা তো তাদের নিতে হল। আমি সরকারে আছি, পয়সা দিয়ে টিকা কিনে বিনা পয়সায় দিচ্ছি। আর বিনা পয়সার টিকা তো নিয়েছে। নেয়নি বিএনপি নেতারা?সবাই নিয়েছে। কিন্তু তার আগে তাদের কথাগুলো কী ছিল?”

গণভবনে থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে অনুষ্ঠানে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাহবুব উল আলম হানিফ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মেরিনা জাহান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও সভায় বক্তব্য রাখেন।