বুধবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এই স্বাধীনতা সংগ্রাম যেটা হয়েছিল, স্বাধীনতার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম আমরা, স্বাধীনতার যে কমিটমেন্ট ছিল, যে ইশতেহার ছিল তার একটাও আওয়ামী লীগ সরকার কোনোদিনই পূরণ করেনি।
“তারা বাকশাল গঠন করেছিল, পত্রিকা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল, অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছিল, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল এই আওয়ামী লীগ। আজকে একটা ভিন্ন মোড়কে ছদ্মবেশে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু রেখেছে।”
‘স্বাধীনতার ইতেশহার’ দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উপদযাপন কমিটির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।
ফখরুল বলেন, “আজকে যে বিষয়ে আলোচনা করছি- শাহজাহান সিরাজের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, যারা স্বাধিকার আন্দোলনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, যারা অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেও আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তাদেরকে এখন আওয়ামী লীগ স্মরণ করে না। স্মরণ করে না আ স ম আবদুর রবকে, স্মরণ করে না শাহজাহান সিরাজকে।
“আমরা সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে তাদেরকে সামনে নিয়ে এসেছি। আমরা ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাই না। আমরা ইতিহাসে যার যার অবস্থান সেটা দিতে চাই।”
১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। এর আগের দিন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
স্বাধীনতার ইশতেহারের বক্তব্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে ব্যক্তি, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে। আওয়ামী লীগের শাসনে বাংলাদেশে এই ১৫ বছরে এখন ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য আকাশ-পাহাড় সমান হয়ে গেছে, বাক স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা সব কিছু হরণ করা হয়ে গেছে। আর অঞ্চলে অঞ্চলে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।”
তিনি সম্প্রতি কারাগারে মারা যাওয়া লেখক মুশতাক আহমেদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “লেখক মুশতাক আহমেদ, তাকে শুধু সমালোচনামূলক একটা লেখার জন্য এবং সেটা নিজে না, কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর লেখতে গিয়ে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। ৬ মাস তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিল।
“এই মুশতাক আহমেদ একা নন। এই ধরনের সাতশ মানুষকে তারা শুধু সমালোচনা করার জন্য তুলে নিয়ে আটক করে রেখেছে। আমাদের ছাত্রদলের নেতারা এটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আপনারা দেখেছেন- কি নির্মমভাবে নিষ্ঠুরভাবে তাদের এখানে নির্যাতন করা হয়েছে, পুলিশ তাদেরকে পিটিয়েছে। শুধু তাই না, তাদের বাসা থেকে তুলে রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে কি পৈশাচিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এখন জানতে চান পুলিশ প্রতিপক্ষ কেন? প্রতিপক্ষ তো আপনারা বানিয়েছেন নিজেদের।”
স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সভাপতির বক্তব্যে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন একাত্তর সালে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দিবস দুটি উদযাপনের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, “আজকে প্রজন্ম, আজকে যারা ছাত্র সমাজ তারা যাতে বুঝতে পারে যে সেদিন যদি পতাকা ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে তুলতে হয়, পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার শাহজাহান সিরাজকে পাঠ করতে হয় সেদিন কী বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না?
“এটা যাতে আজকে প্রজন্ম প্রশ্ন করতে পারে সেদিন রাজনৈতিক দল কারা ছিল তখনই তো আসবে সেদিন এমন একটি রাজনৈতিক দল ছিল তারা পূর্ব পাকিস্তানের ৯৮% ভোট পেয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। তাদের কি দায়িত্ব ছিল? তাহলে কেন ছাত্র সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হয়েছিল।”
জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুস সালামের পরিচালনায় সভায় বিএনপির সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।