কাউকে খাটো করতে চাই না: ফখরুল

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা যে ভূমিকা, তাকে সে অনুযায়ী মূল্যায়নের কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2021, 11:44 AM
Updated : 27 Feb 2021, 11:54 AM

শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণও ‘অবশ্যই ইতিহাস’।

এই সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলে সরকারের উদ্যোগের সমালোচনা করেন।

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির আয়োজনে ঢাকার লেইক শোর হোটেলে এই মতবিনিময় সভা হয়।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নে ফখরুল বলেন, “আমরা শুধু ৭ মার্চ নয়, আমরা ২রা মার্চ,  ৩রা মার্চ পালন করছি। অমরা ২রা মার্চ কেন করছি? সেদিন প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন আসম আবদুর রব, তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা।

“তিন তারিখ কী? স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন শাহজাহান সিরাজ সাহেব। এটাকে অস্বীকার করব কী করে? আজকে তার রাজনৈতিক ধারা ভিন্ন, রাজনৈতিক দল ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু দ্যাট ইজ রিয়েলিটি, দ্যাট ইজ পার্ট অব হিস্ট্রি।”

“ঠিক একইভাবে যে ভাষণ শেখ মুজিবুর রহমানের, অবশ্যই ইতিহাস। অবশ্যই তার সম্মান, তার মর্যাদা তাকে দিতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে, ৭ মার্চ আপনি যখন পালন করবেন, তখন এই কথা বলবেন ৭ই মার্চের ডাকে হয়ে গিয়েছিল কি না সেটা তো আলোচনার মধ্যে আসবে, ইতিহাস থেকে আসবে, ইতিহাসের সমস্ত বই থেকে আসবে “ বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “একই সঙ্গে ২৬ মার্চ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে ঘোষণা জাতিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলো এবং সমগ্র জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এটাও ইতিহাস। সুতরাং এগুলো কোনটাই অস্বীকার করা যাবে না।”

“কাউকেই খাটো করার কোনো রকম ইচ্ছা আমাদের নেই এবং আমরা বিশ্বাস করি সেটা উচিৎও না,” বলেন তিনি।

জাতিকে বিভক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “জাতিকে প্রথম থেকে তারা স্বাধীনতার পক্ষে, স্বাধীনতার বিপক্ষে, চেতনার পক্ষে, চেতনার বিপক্ষে নিয়ে গেছে।”

কারাগারে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট-ব্যবসায়ী মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ ধরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “আজকে যে ডিজিটাল আইন তৈরি করা হয়েছে, আপনারা সাংবাদিকরা তার সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। আপনাদের প্রায় ৪শ জন বিভিন্নভাবে ভুক্তভোগী, কত জনকে জেল খাটতে হয়েছে। আপনাদের ফটোগ্রাফার কাজল, তার আগে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এরা সবাই। সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। এদের অপরাধ শুধু লেখার জন্য।

“আমার প্রশ্ন এই জায়গায় যে, এর জন্য তো আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেনি, এজন্য আমরা স্বাধীনতা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করব। আমরা স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি পালন করার ওই একটাই উদ্দেশ্য যে, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম। আমরা কোনো একজন ব্যক্তি, কোনো একটা পরিবার, কোনো একটা দলের একান্ত ব্যক্তিগত পারিবারিক সম্পত্তি করার জন্য এদেশ স্বাধীন করি নাই।”

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ বলেন, “মেজর জিয়া ২৫ মার্চ কালো রাতের শেষ প্রহরে অথবা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অভ্যন্তর থেকে রিভোল্ট করে কর্নেল জানজুয়াকে গ্রেপ্তার করে অস্ত্রাগার থেকে সকল অস্ত্র নিয়ে বাঙালীদের সজ্জিত করে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হন। পরবর্তীকালে ২৭ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন।জিয়াউর রহমান প্রথম পাকিন্তানি সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন সরাসরি।

“অত্যন্ত বেদনাদায়ক গত ১২ বছর দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিতর্কিত করার জন্য, নানাভাবে বিকৃত করার জন্য হেন চেষ্টা নাই, যা করা হয় নাই। যিনি প্রথম যুদ্ধ ঘোষণা করলেন, যিনি প্রথম সেক্টার কমান্ডার, প্রথম ফোর্সেস কমান্ডার, তাকে বিতর্কিত করার জন্য কি না করেছে। সর্বশেষ তার খেতাব বাতিলের জন্য আজকে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে,যে প্রচেষ্টা নিচ্ছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিশ্বাস করি, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করার অর্থ মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অম্মান করা।”

ফখরুল বলেন, “জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে। কে কার খেতাব নিল, না নিল তাতে জিয়াউর রহমানের কিচ্ছু যায় আসে না। এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষেরও কিছু যায় আসে না। বিএনপিরও কিচ্ছু যায় আসে না।

“শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খেতাব কারও দয়ায় নয় বা কোনো সরকারের বা কোনো ব্যক্তির আনুকূল্যে নয়। তিনি এটা অর্জন করেছিলেন তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে। এই খেতাব স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান সরকারই দিয়েছিল। এই খেতাবকে তুলে নেওয়ার যে অপচেষ্টা, তা জনগণ কোনোদিনই মেনে নেবে না।”

বিএনপিতে একাত্তরের রনাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা বেশি বলে দাবি করেন ফখরুল।

দেশে ‘গণতন্ত্রহীন’ অবস্থায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কে কী করল, না করল, বড় কথা নয়। এটা আমার অধিকার, আমি এই স্বাধীনতার ৫০ বছর অবশ্যই পালন করব। এটা কোনো ব্যক্তি, কোনো গোষ্ঠি বা অনির্বাচিত সরকারের পালন করার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক না।”

বিএনপি মহাসচিব জানান, তাদের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে।

সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে দৈনিক যুগান্তরের উপ সম্পাদক আহমেদ দীপু, দৈনিক কালের কণ্ঠের উপ-সম্পাদক এনাম আবেদীন, দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক সবুজ ইউনুস, প্রধান প্রতিবেদক লোটন একরামসহ জ্যেণ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শ্যামা ওবায়েদের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মিডিয়া কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, আতিকুর রহমার রুমন, শায়রুল কবির খান, ফারজানা শারমিন পুতুল, ইয়াসির খান, মাহমুদা হাবিবা, শফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, মীর সোলায়মান, নুরুল ইসলাম সাজু, বাবুল তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।