ইতিহাসে বামপন্থিদের অবদান অস্বীকার করা হচ্ছে: মেনন

বাংলাদেশের ইতিহাসে বামপন্থিদের অবদান অস্বীকার করে ‘অসত্য তথ্য’ তুলে ধরা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2021, 12:23 PM
Updated : 22 Feb 2021, 12:23 PM

সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “স্বাধীনতা আন্দোলনে জাতীয়তাবাদী শক্তির সাথে এদেশের বামপন্থিরাও কেবল গুরত্বপূর্ণ অবদানই রাখেননি, অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকাও পালন করেছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সেই মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে বামপন্থিরাই আগুয়ান ভূমিকা পালন করেছিলেন।”

সামরিক শাসনের মধ্যে ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বামপন্থিরাই ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার’ প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে জানান মেনন। ওই সমাবেশের বক্তাদের সাত বছর ও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ হওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, “কেবল তাই নয়, তার আগে থেকে মাওলানা ভাসানী ও বামপন্থিরা এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাতে অগ্রগামী ছিলেন।”

মুক্তিযুদ্ধেও বামপন্থিদের অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার কথা উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা মেনন বলেন, “কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে এখন ইতিহাসে বামপন্থিদের অস্বীকার কেবল নয়, অনেক ক্ষেত্রে অসত্য তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে।”

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে মুক্তিযুদ্ধে মাওলানা ভাসানী ও বামপন্থিদের অবদানের স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে সরকারের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, “সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার মধ্য দিয়েই সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালন স্বার্থক হয়ে উঠবে। আগামী প্রজন্ম জানবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস।”

আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার ঘোষণা’ দিবসের ৫১ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেই এগিয়ে যাবে ওয়ার্কার্স পার্টি। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের দ্বিধা, সংশয়, কোনো আপসকামীতার প্রশ্রয় ওয়ার্কার্স পার্টি দেবে না।”

সংসদে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কেটে প্রচারের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়ে এই সংসদ সদস্য বলেন, “স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে কে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কর্তন করল, কে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দিল ওয়ার্কার্স পার্টি তার জবাব চায়। আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও লক্ষ্য বাদ দিয়ে সামনে এগোনো যাবে না।”

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সদস্য গৌতম দাস মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও বাংলাদেশের শহীদদের এবং মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেন।

বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ‘সিপিএম প্রথম দাবি উত্থাপন করেছিল’ জানিয়ে তিনি বলেন, “কেবল দাবিই নয়, ধর্মঘট হরতালও করেছে। ইন্দিরা গান্ধীর কাছে আমাদের পার্টি দাবি করে, বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিতে হবে।

“এছাড়া আমরা আমাদের পার্টির সামর্থ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি।”

দলের পলিট ব্যুরোর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুল হাসান মানিকের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক সামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল।