আল-জাজিরার বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে: তথ্যমন্ত্রী

‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ প্রতিবেদনটির জন্য কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2021, 02:54 PM
Updated : 16 Feb 2021, 03:21 PM

মঙ্গলবার তথ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এই মন্তব্য করেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আল-জাজিরার রিপোর্ট যেটি করা হয়েছে আপনারা দেখেছেন, সেটার শিরোনামের সাথে রিপোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই। শিরোনাম দেওয়া হয়েছে 'অল আর দ্য প্রাইম মিনিস্টার মেন', প্রতিবেদন হচ্ছে সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।”

তিনি বলেন, “প্রতিবেদনটি দেখে শুনে মনে হয়েছে এটি ব্যক্তিগত আক্রোশবশত একটি রিপোর্ট। এই ব্যক্তিগত আক্রোশবশত একটি রিপোর্ট। আল-জাজিরার মতো একটা টেলিভিশনে যখন এই রিপোর্ট হয়, সেই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আল-জাজিরার গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু কমেছে। বিশ্বব্যাপী আল-জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

“তাদের নিরপেক্ষতা-বস্তুনিষ্ঠতা, একইসাথে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রশ্ন যে আজকে উঠেছে তা নয় এ প্রশ্ন বহুবার উঠেছে। বহু দেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ আছে। এমনকি ভারতেও বন্ধ আছে, এখনও অনেক দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে। তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রচণ্ডভাবে লোপ পেয়ে তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে।”

আল-জাজিরার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা সরকার নেবে কি না- জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যদি হাই কোর্টে যায় বা আদালতে যায়, সেক্ষেত্রে আদালত থেকে যদি কোনো নির্দেশনা পাই, তাহলে আদালতের নির্দেশনা অবশ্যই আমরা পালন করব।”

প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরও আল-জাজিরার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না- জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, “আমরা কিন্তু ব্যবস্থা নিতে পারতাম। অন্যান্য দেশে যেভাবে টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয়, আমাদের দেশে আমরা চাইলে সেভাবে বন্ধ করতে পারতাম। আমরা বন্ধ করিনি। কারণ আমরা গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।”

তিনি বলেন, “এই প্রতিবেদনের পেছনে যে শক্তি আছে, তার মধ্যে ডেভিড বার্গম্যান আছেন। ডেভিড বার্গম্যান হচ্ছে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তার বিরুদ্ধে বিচার চলছিলে। তিনি হাই কোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন, এরপর তিনি দেশ ত্যাগ করে চলে গেছেন।”

সেনাপ্রধানের দুই ভাইয়ের সাজা মওকুফের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “তাদের সাজা মওকুফ করা হয়েছে কি না জানি না। তবে একজনের সাজা মওকুফ হয়েছে বলে আমি জানি। আমি পুরোপুরি বিষয়টা নিয়ে ওয়াকিবহাল নই।”

এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “তবে তারা যে কারণে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনির এক আত্মীয়কে খুন করার অপরাধে। অর্থাৎ জাতির পিতার হত্যাকারীর সহযোগীকে হত্যা করার অপরাধে তারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং খুনের সাজা মাফ করার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির আছে।”

সাজা মাফের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির রয়েছে, তা মনে করিয়ে দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “বিচার বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্রপতি সেটি মাফ করে থাকেন।

“এখন তারা বহু বছর সাজা খেটেছেন, একজন সম্ভবত ২০ বছর সাজা খেটেছেন। এক পর্যায়ে কিন্ত সাজা মওকুফ করা হয়। এটি একটি ইউজুয়াল প্রসিডিউর। অনেকদিন সাজা খাটার পর কয়েদি যদি ভালো আচরণ করে সেক্ষেত্রে সাজা মওকুফ করা হয়, সেটা ইউজুয়াল প্রসিডিউর।"

তারা বানরের মতো নাচানাচি করছে’

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আল জাজিরার প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকার দিল্লির সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রথমত রিজভী সাহেব মাঝে মধ্যেই কিছু উদ্ভট কথা বলেন। এটি তার চিরাচরিত উদ্ভট কথার মধ্যে এটিও একটি।

“আমাদের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক বহুদিনের। ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। ভারত আমাদের দেশের তিন দিকে পরিবেষ্টিত হয়ে আছে। ভারতের সাথে আমাদের সব সময় সুসম্পর্ক। বর্তমান ভারত সরকারের সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেই সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আল-জাজিরার একটি রিপোর্টে যেভাবে তারা বানরের মতো নাচানাচি করছে। এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। একটি রিপোর্ট বেরিয়েছে সেনাপ্রধান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে যেভাবে নাচানাচি। আমি অবশ্য তুলনা করছি না, এটি অনেকে বানরের নাচানাচির কথা বলছে। এটি নিয়ে আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন নই।”