ক্ষমতাসীনদের ‘অঙ্গ সংগঠন’ হয়ে গেছে নির্বাচন কমিশন: ফখরুল

নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন দলের ‘অঙ্গ সংগঠনে’ পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2021, 11:43 AM
Updated : 28 Jan 2021, 11:43 AM

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন যে, এই নির্বাচন কমিশন আসলে নিরপেক্ষ কোনো সংগঠন নয়। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন সরকারের, আওয়ামী লীগের একটা লেজুড়ভিত্তিক একটা সংগঠনে দাঁড়িয়ে গেছে। মূলত তারা তাদের একটা অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

“এই নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। এটার দায়িত্ব হচ্ছে নিরপেক্ষভাবে, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখছি যে, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। যে দেশে সংবিধানের মূল কথা হচ্ছে, জনগণ হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক এবং জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবে, তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।”

ফখরুল বলেন, “আমরা বার বার বলেছি, এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আমরা দাবি করেছি যে, নির্বাচন কমিশনের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা দরকার, এই সরকারের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা দরকার এজন্যে যে, তারা সংবিধানকে লঙ্ঘন করে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং বিনা ভোটের একটা বেআইনি সরকার তারা হয়ে আছে।”

প্রধান নির্বাচন কমিশন কে এম নুরুল হুদার নির্বাচন কমিশন পরিচালনার কোনো যোগ্যতা নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

চট্টগ্রাম সিটি করোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এ নির্বাচনে যা হয়েছে তা আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন। একেবারে রক্তাক্ত, মানুষ মারা গেছে দুইজন। বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্রে থাকতে দেওয়া হয়নি, তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বের করে দেওয়া হয়েছে।

“সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার যেটা, এখন প্রত্যেকটি নির্বাচনেই প্রশাসনকে পুরোপুরি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএনপির প্রতিপক্ষ এখন আর আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পুলিশ প্রশাসন।”

স্থানীয় সরকার নির্বাচন অংশ নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “বিএনপি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করে।অর্থাৎ কখনও ভিন্নপথে বন্দুক-পিস্তল, জোর করে অথবা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে না। বিএনপি জনগণের সমর্থনের মধ্য দিয়েই, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। সেজন্য তারা সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে।

“অনেকে বলেন এই নির্বাচন করার কী যুক্তি আছে? আমরা বলি এই নির্বাচন করাটা গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একটা অংশ হিসেবে নিয়েছি। নির্বাচনে আমাদের নেতাকর্মী-সমর্থকদের সম্পৃক্ত করতে পারি এবং জনগণের কাছে যেতে পারি। যেটা অন্য সময় যাওয়াটা কঠিন দুষ্কর ব্যাপার। যেতেই দেয় না, মুভ করতে দেয় না। সভা-সমিতি-মিটিং করতে দেয় না। যেটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ন্যূনতম অধিকার মানুষের জন্য। সেই ডেমোক্রেটিক স্পেসটা তারা নিয়ে নিয়েছে। সেই কারণে আমরা নির্বাচনে অংশ নেই।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক হুইপ সৈয়দপুরের নেতা শওকত চৌধুরীর যোগদান উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠান হয়।

শওকত চৌধুরীকে বরণ করে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “শওকত চৌধুরী সাহেবকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আশা করি, যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে সৈয়দপুরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি নেতৃত্বে দেবেন।”

অনুষ্ঠানে শওকত চৌধুরী বলেন, “জাতীয়তাবাদকে উদ্ধার করার সময়। এখন দেশে দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। দুইটাই গণতান্ত্রিক দল। আজকে আওয়ামী লীগ যে গণতন্ত্রটাকে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে বা চালাচ্ছে সেটা হল প্রশাসনিক গণতন্ত্র। জনগণের গণতন্ত্র তাদের মধ্যে নাই। জনগণের গণতন্ত্র রয়েছে বিএনপিতে। জনগণের গণতন্ত্রের জন্য তারা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করছে। এই যোগদানের মাধ্যমে আমি সেই সংগ্রামে সম্পৃক্ত হলাম।”

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, সৈয়দপুর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল গফুর সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ, সৈয়দপুর বিএনপি সদস্য সচিব শাহীন আখতার, রংপুর জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের রিয়াজ উদ্দিন নসু, শায়রুল কবির খানসহ সৈয়দপুরের স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।