এখন টিকা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে: ফখরুল

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2021, 11:40 AM
Updated : 28 Jan 2021, 11:40 AM

বৃহস্পতিবার এক দলীয় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এত বড় একটা করোনা অতিমারী আমাদেরকে আক্রমণ করেছে, সারা বিশ্ব আক্রমণ করেছে এটাকে মোকাবিলা করার জন্য তাদের ভূমিকাটা দেখেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু তারা দুর্নীতি করার জন্য কাজগুলো করেছে। এমনভাবে শুরু হয়েছে যে, এটা এখন ভঙ্গুর অবস্থায়।

“এখন ভ্যাকসিন নিয়ে শুরু হয়েছে। এই ভ্যাকসিনেও কীভাবে দুর্নীতি হচ্ছে। দুই ডলার ৩৩ সেন্ট দিয়ে কেনা ভ্যাকসিন এরা (সরকার) চার ডলার দিয়ে কিনছে। সেখানে মধ্যস্বত্ত্বভোগী তাদের নিজস্ব একজন সুবিধাভোগীকে তারা সেই দায়িত্ব্ অর্পণ করেছে।”

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা আনছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছে। সেরামের টিকা বাংলাদেশে আনার ক্ষেত্রে ‘ডিস্ট্রিবিউটরের’ ভূমিকায় রয়েছে দেশের ওষুধ খাতের শীর্ষ কোম্পানি বেক্সিমকো।

চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা পাবে বাংলাদেশ, তার মধ্যে প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ টিকা এরইমধ্যে দেশে এসেছে। বুধবার দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মির্জা ফখরুল বলেন, “বর্তমান সরকারের হাতে স্বাস্থ্য খাত ধ্বংস হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ কোনো স্বাস্থ্য সেবা পায় না। এখানে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাধারণ মানুষ যাদের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার, সেটা তারা পাচ্ছে না।”

তিনি বলেন, “প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন এখানে একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি। যার ফলে কী করে জনগণের পকেট থেকে টাকা বের করে নিয়ে এসে তাদের পকেটে ভরবে। যার ফলে কী হয়েছে? দুই শ্রেণি হয়েছে। একটা দরিদ্র শ্রেণী আরেকটা বিত্তশালী শ্রেণী। বড় লোক শুধু বড়ই হয়েছে আর গরিবরা শুধু গরিবই হয়ে্ছে।”

প্রয়াত সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “স্বাধীনতার যে সূবর্ণ জয়ন্তী আমরা পালন করতে যাচ্ছি, সেই জয়ন্তীতে আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সবচেয়ে বড় ফোকাস পয়েন্টে নিয়ে আসার চেষ্টা করব এবং তার অবদানসমূহ নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

“এই সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করছে, ইতিহাসকে বিকৃত করছে।”

সাতক্ষীরার সাবেক সংসদ সদস্য দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৩৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিকে বিনষ্ট করতে চায়, সমস্ত গণতন্ত্রের যারা নেতা-কর্মী তাদেরকে ধ্বংস করতে চায়। তারই ফলশ্রুতিতে আজকে আমাদের বিরুদ্ধে ৩৫ হাজার মামলা, ৩৫ লক্ষ আসামি। সেই পুরনো মামলা নিয়ে আসছে।

“গত পরশু সাতক্ষীরায় ২০০২ সালের একটি মামলায় আমাদের দলের সম্পাদক সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ প্রায় ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি ওই পুরনো মামলার রায় হবে। সম্ভবত সেই মামলায় তাদেরকে সাজা দেওয়া হবে। এটা হচ্ছে সরকারের অপকৌশল যে, এভাবে জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা এই গ্রেপ্তারের নিন্দা এবং তাদের মুক্তি দাবি করছি।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘স্বাস্থ্য খাত ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও ডা. মাহমুদুর রহমান নোমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বি্শেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম সেলিম, মোফাক্কারুল ইসলাম রানা, আবদুস শাকুর খান, আজহারুল ইসলাম. জাহিদুল কবির, ফেরদৌস আহমেদ, নিলুফার ইয়াসমীন, জাহানারা বেগমসহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।