চট্টগ্রামের ভোটের উত্তাপ সংসদে

বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ আর বিএনপির অভিযোগের মধ্য দিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট চলছে চট্টগ্রামে, সেই উত্তাপ গড়িয়েছে সংসদেও।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2021, 07:28 AM
Updated : 27 Jan 2021, 09:56 AM

একটি খসড়া আইন পাসের সময় বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ভোটের প্রসঙ্গ তুললে আইনমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির সদস্যরা এর জবাব দেন।

বুধবার ‘দ্য সিভিল কোর্টস (সংশোধন) - ২০২১’ সংসদে পাসের সময় জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব তোলেন বিএনপির হারুনুর রশীদ।

সে সময় তিনি বলেন, “সংবিধানে বলা আছে সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রশাসন চালাবেন। কিন্তু আজ কী হচ্ছে? নির্বাচনের নামে তামাশা হচ্ছে, প্রহসন হচ্ছে। এর প্রয়োজন নেই তো।

“ভোটের প্রয়োজন নেই, আইন করে নির্বাহী ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রী যাকে খুশি মনোনয়ন দেবেন।  তিনি নির্বাচিত হবেন। সকালে দেখলাম, চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশনে কী হচ্ছে!”

এ সময় সরকারদলীয় সদস্যরা প্রতিবাদ করলে হারুন বলেন, “একটুকুও অসত্য বলছি না। তথ্য জেনে বলছি।”

পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অন্য সদস্যদের জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার পর বলেন, “আমরা এখানে যারা আছি, গতকালকে জন্ম নিইনি। উনারা নির্বাচনের কথা বলছেন। আমরা জিয়াউর রহমানের সময় ‘হ্যাঁ-না’ ভোট দেখেছি। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দেখেছি। ব্যালটবাক্স পাওয়া যেত না। ভোট যে দেবে, ব্যালট বাক্স নেই।

“যাদের এই চরিত্র, তাদের কাছ থেকে নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু করতে হয়, সেটা শেখার প্রয়োজন নেই। জনগণকে ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি।”

পরে সংশোধনী প্রস্তাব তোলার সময় বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, “ভোট দেয় প্রশাসন। আর দেখে জনগণ। ভোটটা সুষ্ঠু করে করলেই তো হয়। কারও থেকে ভোট শিখতে হবে না। ভোট কীভাবে দিতে হয় সেটা সবাই জানে। ভোটটা দিতে দিলেই হয়।”

হারুনের কথার জবাবে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, তার এলাকায় পৌরসভা নির্বাচন ‘অত্যন্ত সুষ্ঠু’ হয়েছে।

পীর ফজলুর রহমান বলেন, “সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছে। নির্বাচন অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে বিএনপির প্রার্থীরাও সেটা বিবিসিকে বলেছেন।”

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “৮৪% ভোট পড়েছে আমার পৌরসভায়। লাঙ্গল জয়ী হয়েছে। সবাই মিলে চাইলে ভোট সুষ্ঠু হবে।”

পরে সংশোধনী প্রস্তাব তোলার সময় হারুন বলেন, “এখনই দেখেন চট্টগ্রামে বহু কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের পাস দেওয়া হচ্ছে না। চাইলে এখনই ফোনে দেখাতে পারব।”

সংশোধনী প্রস্তাবের জবাব দিতে উঠে আইনমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি আমলে কখন, কোথায় ভোট হত, জানতাম না। ভোট হলে ১৫ ফেব্রুয়ারি কি নির্বাচন হয়েছিল? কতজন ভোট পেয়ে জিতেছিল।”

চট্টগ্রাম নগরীর ৭৩৫টি কেন্দ্রে বুধবার সকাল ৮টায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে।

১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটার এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র, ৩৯ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ১৪ জন নারী কাউন্সিলরকে নির্বাচিত করবেন।

নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের মধ্যে।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের ‘বের করে দেওয়া’ হয়েছে; এমনকি এজেন্টদের ‘মারধর’ এবং ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে ‘না দেওয়ার’ অভিযোগও তিনি পেয়েছেন।

নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ২১ জন। আর পাহাড়তলীতে এক কেন্দ্রের বাইরে গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন।