আর্থিক খাত নিয়ে সংসদে জাপা এমপিদের সমালোচনা

বিদেশে টাকা পাচার এবং লুটপাটকারীদের পরিচয় জাতীয় সংসদে জানতে চেয়েছেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2021, 08:37 AM
Updated : 26 Jan 2021, 08:37 AM

মঙ্গলবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন কাজের প্রশংসাও করেছেন ময়মনসিংহের এই সংসদ সদস্য।

 টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে অভিযোগ তুলে ফখরুল ইমাম প্রধানমন্ত্রী উদ্দেশে বলেন, “লুটেরা কারা? এরা কী দলে? সরকারে না আশপাশে? এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাই।”

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি আয়ের তথ্যে ‘গড়মিলের’ অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “সরকারের এই দুটি প্রতিষ্ঠানের ৫ বছরে রপ্তানি আয়ের যে গড়মিল, তা দিয়ে ছয়টি পদ্মা সেতু করা সম্ভব।”

জাতীয় পার্টির এই সাংসদ বলেন, ইপিবির হিসাবে গত ৫ বছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে রপ্তানি আয় ৮০ বিলিয়ন ডলার।

“ইপিবির তুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০ বিলিয়ন ডলার কম। এ হিসেবে ৫ বছরে লাপাত্তা হয়েছে এক লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় আছে। আদৌ আছে কি না, তা জানেন না নীতি নির্ধারকেরা।”

দেশে ধনীদের আয় যেভাবে বাড়ছে দরিদ্রদের আয় সেভাবে বাড়ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এর ফলে আয় ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ দরিদ্র। প্রায় দুই কোটি অতিদরিদ্র।”

ফখরুল ইমাম বলেন, “এখন শোনা যাচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা ব্যবহার করা হবে না। তাহলে এতদিন এত আন্দোলন চলল কেন? এর অর্থদণ্ড কত? চীনের সাথে ২৭টি সমঝোতা স্মারকে সাড়ে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে। বাস্তবে এর সামান্য বাংলাদেশে এসেছে। কত এসেছে তা জানতে চাই। দেশের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির বিরাট অভিযোগ উঠেছে। বৃহৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে কী না তা জানতে চাই।”

এদিকে পিপলস লিজিং কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের জীবন ‘দুর্বিষহ’ হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আরকে সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, “বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশে টাকা পাচার করছেন। এটা দেখা দরকার।”

দেশের অর্থনৈতিক খাতের ‘অব্যবস্থাপনার’ সমালোচনা করে এই সংসদ সদস্য বলেন, “প্রধানমন্ত্রী অনেক কাজ করছেন। কিন্তু আামদের অর্থনৈতিক সেক্টর পিতামাতার বখে যাওয়া সন্তানের মত। অবাধ্য সন্তানের মত। সরল পথে আনা যাচ্ছে না। হাই কোর্টও বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ঠগবাজ, প্রতারকদের আশ্রয় দিচ্ছেন। এক মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই পর্যবেক্ষণ এসেছে।”

জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, “পিকে হালদারকে বিদেশ থেকে ধরে এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। না হলে ভবিষ্যতে উদাহরণ হয়ে থাকবে। অনেকে টাকা পয়সা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাবে। এ ধরণের আরও কত পিকে হালদার আছে দুদককে তা খুঁজে বের করতে হবে।“

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার সোমবারের বক্তব্যের সমালোচনা করে পীর ফজলুর রহমান বলেন, “গতকাল একজন বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ খাদ্য পাচ্ছে না। আমি বিনয়ের সাথে বলতে চাই, কোথা থেকে তথ্য পেলেন জানি না। এসব জানার জন্য তথ্য লাগে না। মানুষের সাথে মিশলেই বোঝা যায়। বাংলাদেশে কেউ অনাহারে নেই।... উনার কথা মিথ্যা।”

টিকা নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “প্রথমে বলেছে ভ্যাকসিন আসবে না। এখন যখন আসল, বলছে তারা নেবেন না। আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। সংকটের সময় তারা বলে ‘পেহেলে আপ’। ১/১১ এর সময়ও করেছে। এখনও করছে। টিকা নিয়ে রাজনীতির সুযোগ নেই। ক্রান্তিকালে রাজনীতি হয় না। মানুষের জীবন নিয়ে রাজনীতি হয় না।”

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ বি তাজুল ইসলাম বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে বলেন, “আমাদের সিনিয়র সংসদ সদস্য সেলিম ভাই একান্ত আলাপে বলেছিলেন, জিয়াকে হত্যা করলে না কেন। তোমার পক্ষে এটা সম্ভব ছিল। আমি ছিলাম তখন ক্যাপ্টেন। তাই আমার পক্ষে এটা সম্ভব ছিল না।”

ক্ষমতাসীন দলের আরেক সাংসদ সাইফুজ্জামান বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের ইতিহাসই মিথ্যায় ভরা। পৌর নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে দেখছি, জনগণ তাদের ভোট দিতে চায় না। এ কারণে বিএনপি উন্মাদের মত আচরণ করছে।”

অন্যদের মধ্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, আওয়ামী লীগের সুবিদ আলী ভুইয়া, মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, আব্দুস সালাম মুর্শেদী এদিন আলোচনায় অংশ নেন।