রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ সব এমপিকে এক দিনে টিকা নেওয়ার আহ্বান চুন্নুর

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে মানুষের সংশয় দূর করতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সব সংসদ সদস্যকে একই দিনে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2021, 09:47 AM
Updated : 25 Jan 2021, 10:29 AM

সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, “রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য এবং সব সংসদ সদস্য-সবাই একদিনে ভ্যাকসিন নিলে কারো মধ্যে আর ভ্রান্তি থাকবে না।”

বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারীর এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আশা হয়ে এসেছে টিকা। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনছে, যার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছেছে।

এর আগে ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে একই টিকা ২০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর সরকার ২৭ জানুয়ারি থেকে টিকা প্রয়োগ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সেদিন ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে সবার আগে টিকা দেওয়া হবে, যার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

২৭ ও ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনের মধ্যে পরীক্ষামূলক টিকা প্রয়োগ হবে। তারপর ৮ ফেব্রুয়ারি টিকাদান শুরু হবে সারাদেশে।

সংসদে অর্থ খাতের সমালোচনা করে মুজিবুল হক বলেন, “ব্যাংকের টাকা নিয়ে কথা এসেছে। পিকে হালদার সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা মেরে দিলেন। তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যংক করেটা কী? হলমার্ক শত শত কোটি টাকা পাচার করেছে। বাংলাদেশে ব্যাংক কী দেখে না?”

তিনি বলেন, “গুরু ছাড়া দুর্নীতি হয় না। ব্যাংক খাতের এসব দুর্নীতির গুরু হল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের কারণে বিভিন্ন বাংক থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে ধরার কেউ নাই?

জাতীয় পার্টির এই এমপি বলেন, “দুনীতির অভিযোগ আসে শুধু রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে। কানাডার বেগম পাড়ায় ২৮টি বাড়ির মধ্যে ২৪টা বাড়ি সরকারি কমচারীদের। আমলারা কি সবকিছুর ঊর্ধ্বে?  কোন কর্মকর্তার ছেলে মেয়ে বিদেশে পড়ে না?

রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ এলাকার এই সংসদ সদস্য বলেন, “স্বীকার করব সরকার উন্নয়ন করেছে। অনেক উন্নয়ন করেছে। এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতায় ছিল তিনিও করেছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার বাইরেও অনেক কিছু আছে।

“কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য পাবে- এ বিষয়ে গাইডলাইন ভাষণে আশা করেছিলাম। সেটা নেই। আমার এলাকায় কৃষক সবজি উৎপাদন করে। খিরাই এক টাকা কেজি, ফুলকপি ২ টাকা- কেউ নেয় না। সবজির মৌসুমে সে মূল্য পায় না, পচে পড়ে থাকে। এই সবজি প্রসেস করে রাখার জন্য গাইডলাইন আশা করেছিলাম।”

বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে চুন্নু বলেন, “রাস্তাঘাটে অনেক মোটর সাইকেল। কোনো ট্রেইনিং নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের কথা কী বলব! কেনাকাটার কী যে অবস্থা! ১০০ টাকার জিনিস ৫০০ টাকা। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২৬২ গাড়ির হিসাব নেই।”

নিজের উত্থাপিত একটি বেসরকারি বিলের কথা তুলে এক সময়কার আইনবিভাগের কর্মকর্তা চুন্নু বলেন, “হাই কোর্টে বিচারপতি নিয়োগে আইন হয়নি। আমি প্রস্তাব এনেছিলাম, বেসরকারি বিল এনেছিলাম। তিনজন বিচারপতিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কী অভিযোগ জানি না। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রের বেতন পাচ্ছেন তিন বছর কোনো কাজ না করে। জবাব কে দেবে? ইমপিচমেন্ট করার পর রিটে তা বাতিল। এখন রিভিউতে আছে। সরকার যাওয়ার পর হবে? কাজে সমন্বয় প্রয়োজন। বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক দেশে ইমপিচমেন্ট সংসদের হাতে।”

বিএনপির সংরক্ষিত আসনের রুমিন ফারহানা আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, “সরকারের সকল ব্যর্থতাকে ছাড়িয়ে গেছে করোনাকালীন ব্যর্থতা। শুরু থেকে করোনা পরীক্ষা, মাস্ক, পিপিই, হাসপাতাল শয্যা, অক্সিজেন সরবরাহ, আইসিইউ, প্রণোদনাসহ সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা এই কঠিন সময়কে কঠিনতর করেছে। পৃথিবীতে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যেখানে নকল করোনা সার্টিফিকেট বিক্রি হয়েছে। এই সবকিছুর পরে এখন যুক্ত হয়েছে টিকা নিয়ে ব্যবসা।”

মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাংসদ মমতাজ বেগম বলেন, “যাদের কিছু ভাল লাগে না, তারা বলেন ভ্যাকসিন সরকার আনতে পারবে না। এখন আসার পর বলছে, এগুলো কী ভাল? সমালোচনা নিয়ে ব্যস্ত যারা, তাদের ভালো কাজটুকু আমাদের আমলনামায় যুক্ত হবে। আমাদের কিছু খারপ থাকলে তাদের খাতায় যুক্ত হবে। এমন নজির শেখ হাসিনা সৃষ্টি করেছেন- কেউ কোনোদিন দেখেনি। গৃহহীন ভূমিহীনদের ৭০ হাজার পাকা ঘর করে দেয়। লক্ষাধিক দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তখন তারা বলে, এত ভালো ভালো না।”

লোকগানের জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পী বলেন, “শিল্পীরা গানের আয়োজনে অংশ নিতে পারছে না। কষ্টে দিন যাচ্ছে। শিল্পী সম্প্রদায়ের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ভ্যাকসিনে যাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।”

সংরক্ষিত আসনের জাকিয়া তাবাসসুম বক্তব্য শেষ করার সময় নিজের তৈরি গান গেয়ে শোনান। “গর্ব আমরা বঙ্গবন্ধু অনুসারী/ বায়ান্নর পথ ধরে একাত্তর অবধি…”