এক সময়কার ছাত্রলীগের নেতা ফিরোজ রশীদ রোববার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় নির্মূল কমিটি বন্ধ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের কিছু সংগঠন আছে। একটি সংগঠন আছে নাস্তিক নির্মূল কমিটি। আরেকটি সংগঠন হচ্ছে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। এই নির্মূল করার ক্ষমতা এদের কে দিয়েছে? আমি জানতে চাই। তুমি কে নির্মূল করার?
“আমার দেশে কোর্ট-কাচারি আছে না? অনেক বিচার করেছে এই সরকার। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হচ্ছে, রাজকারদের বিচার হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, তুমি কেন?... আমি মনে করি যে এদেরকেই প্রতিরোধ করার দরকার।”
এই সংসদ সদস্য বলেন, “তোমরা নিজেরা পুলিশ প্রোটেকশনে থেকে এই ধান্দাবাজি করছ, এইটা জনগণ বিশ্বাস করে না। আমি মনে করি যে এদেরকেই প্রতিরোধ করার দরকার।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করার পর ১৯৮১ সালে জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আজম পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। ১৯৯১ সালে গোলাম আজমকে জামায়াতে ইসলামীর আমীর করা হয়। তার আগেই জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে।
গোলাম আজমের রাজনীতিতে ফিরে আসার প্রতিবাদ জানাতেই গড়ে উঠেছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয়। ১৯৯৪ সালে নির্মূল কমিটির আয়োজনে গণ আদালতের প্রতীকী বিচারে গোলাম আজমের ফাঁসির রায় হয়।
গণআদালতের এই বিচার পরিচালনা করায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার জাহানারা ইমাম ও সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করে।
‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ‘শহীদ জননী’ হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন মুক্তিযুদ্ধে ছেলে গেরিলা যোদ্ধা রুমিকে হারানো এই মা।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগের গণজাগরণেও প্রেরণায় ছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সেই আন্দোলন।
সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, “অনুরোধ করব, এই সমস্ত সংগঠন- এইগুলো বন্ধ করুন। যাতে কেউ মানুষ নির্মূল করতে না পরে। কীসের নির্মূল কমিটি?”