বাকি চিনিকলগুলোও বন্ধের আয়োজন করছে সরকার: বাম জোট

রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ছয়টি বন্ধ ঘোষণা করে সরকার বাকিগুলোও বন্ধের আয়োজন করেছে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2021, 12:24 PM
Updated : 17 Jan 2021, 12:49 PM

বন্ধ ছয়টিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ১০টি চিনিকল এলাকা প্রতিনিধি দলের সফর শেষ করে রোববার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া জানান বাম জোটের সমন্বয়ক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন।

গত ১০ ও ১২ জানুয়ারি নয় জেলায় দশটি চিনিকল ও আখ চাষ এলাকায় ঝটিকা সফরে যান বাম গণতান্ত্রিক জোটের আট প্রতিনিধি।

সফরে চিনিকলগুলোর শ্রমিক, আখ চাষি ও স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় ও পথ সভা করা হয় বলে জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্বাফী রতন।

শ্রমিক ও আখ চাষিদের উদ্ধৃতি করে তিনি বলেন, “ছয়টি চিনিকল সরকার ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করেছে। কিন্তু আগামী মৌসুমে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সবগুলো চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্ত আয়োজনই সরকার করে চলেছে।

“প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে পরবর্তী বছরের আখ চাষের জন্য চিনিকল থেকে বীজ, সার, কীটনাশক ও ঋণ দেওয়া হয়। এ বছর কোনো চিনিকল থেকেই আখ চাষিদের সেই ঋণ ও প্রণোদনা সরবরাহ করা হয়নি। ফলশ্রুতিতে কৃষকদের মধ্যে আশঙ্কা বিরাজ করায় এ বছর আখ চাষে ব্যাপক বিপর্যয় ঘটবে। আখের অপর্যাপ্ততার কারণে চিনিকলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে।”

বাম জোটের সমন্বয়ক জানান, ১৫টি চিনিকলের মালিকানায় ১৯ হাজার ৯৬ একক জমি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বর্তমানে নয় হাজার ১৬ জন কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে ৭১৪ জন কর্মকর্তা, চার হাজার ৪০১ জন কর্মচারী ও তিন হাজার ৯০১ জন শ্রমিক রয়েছেন।

চিনিকল শ্রমিক ও আখচাষিদের থেকে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “এক কেজি আখের উৎপাদন ব্যয় ৬ দশমিক ৬১ টাকা, আর কৃষক সেটা চিনিকলের কাছে বিক্রি করে ৩ দশমিক ৫০ টাকা। সরকার যে চিনিকলের লোকসানের কথা বলে তা কী আদৌ সত্য? আর লোকসান হলেও দায় কার?”

ক্বাফী বলেন, ১৯৩৩ সালে দিনারপুরের সেতাবগঞ্জ ও গোপালপুর চিনিকল দুটি ব্রিটিশ আমলে একই মালিক স্থাপন করেছিলেন। তখন একজন ব্যবস্থাপকই কারখানা চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। এখন প্রতিটি কারখানায় একজন এমডি, চারজন জিএম, ডজনখানেক ডিজিএমসহ বিশাল মাথাভারী প্রশাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে চিনিকলগুলোতে।

“মাসে শ্রমিকদের মজুরি যা দেওয়া হয় তার তিন/চারগুণ বেশি বেতন দিতে হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।”

বাম জোটের সমন্বয়ক বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর সংকটের বড় কারণ হলো চিনির উৎপাদন খরচ আমদানি করা চিনির বাজারদরের তুলনায় অনেক বেশি। এই উৎপাদন ব্যয়ের একটা বড় অংশ আবার ঋণের সুদ।”

চিনির উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অন্যান্য উৎপাদনকারী দেশের তুলনায় একর প্রতি আখের ফলন কম, পুরাতন প্রযুক্তি ও মেশিনের কারণে আখ থেকে চিনি আহরণ হার (রিকভারি রেট) কম, প্রতিযোগীতামূলক না হওয়া, আখ কেনা থেকে চিনি উৎপাদন ও বিপণন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি, ব্যাংক ঋণ ও অপ্রয়োজনীয় জনবলের বেতনভাতা পরিশোধ।

চিনি শিল্প রক্ষায় কয়েকটি দাবি তুলে ধরে বাম জোটের সমন্বয়ক ক্বাফী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধ না করে ভুলনীতি ও দুর্নীতি দূর করে আধুনিকায়ন করে কারখানা চালু করতে হবে। লোকসানের জন্য দায়ি নীতি-নির্ধারক, ‍দুর্নীতিবাজ আমলাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া মজুরি, কৃষকদের আখের বকেয়া মূল্য পরিশোধ, উন্নতজাতর আখ উদ্ভাবনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা বাড়ানো এবং আখ চাষিদের ন্যায্যমূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক সময় মত পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহের দাবি জানানো হয়।

বিনামূল্যে টিকার দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি

রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিনামূল্যে সবাইকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার দাবিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামনে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ করবে বাম জোট।

 সংবাদ সম্মেলনে ক্বাফী রতন বলেন, “করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো বাণিজ্য চলবে না এবং বিনামূল্যে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সকলকে করোনা ভ্যাকসিন দিতে হবে।”

সরকারি উদ্যোগে সংগ্রহ না করে বেক্সিমকোর মাধ্যমে টিকা সংগ্রহের মধ্য দিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে ‘বাণিজ্য’ করার সুযোগ করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের নেতা নজরুল ইসলামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।