টিকা নিয়ে উদ্বেগজনক অবস্থায় আছি: জি এম কাদের

করোনাভাইরাসের টিকা ভারত থেকে সময়মতো পাওয়া যাবে কি না কিংবা এলেও দেশে ঠিকভাবে বিতরণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2021, 12:50 PM
Updated : 7 Jan 2021, 12:50 PM

তিনি বলেছেন, “টিকার বিষয়ে আমরা সংশয়ে আছি …উদ্বেগজনক অবস্থায় আছি। বাংলাদেশের মানুষ সঠিক সময়ে টিকা পাবে কি না, সেটা নিয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না।”

বৃহস্পতিবার ঢাকার পল্টনের একটি রেস্তোরাঁয় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জি এম কাদের নিজের সংশয়ের কথা জানান।

মহামারী রূপ নেওয়া কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বছর বাদে আশা নিয়ে এসেছে টিকা। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা ভারত থেকে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

টিকা উৎপাদনকারী সেরাম ইনস্টিটিউট অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর রপ্তানিতে যাবে বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও ভারতের পক্ষ থেকে যথাসময়ে বাংলাদেশকে টিকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।

জি এম কাদের বলেন, “ভারত সরকার বলছে টিকা দেবে। কিন্তু কবে থেকে …কতটুকু দেবে…. কীভাবে দেবে, তা আমরা জানি না।”

সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে টিকা আসবে এবং তা দেওয়ার যথেষ্ট প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।

সে বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “টিকাগুলো আসার পরে কতগুলো লোককে দেওয়া হবে, কোথায় রাখা হবে?

“সে একটা ডেফিনিট টেম্পারেচারে রাখতে হয়, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য স্পেশাল ট্রান্সপোর্টেশন ফ্যাসিলিটি করতে হয়…স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি করতে হবে… রোগীদের আনতে হবে। আমরা কি কোনো ব্যবস্থা করেছি? “

তিনি বলেন, “আমার জানা মতে, প্রজেক্ট পাস হচ্ছে। এ প্রজেক্ট পাস হওয়ার পরে টাকা স্যাঙ্গশন হবে, মানুষ সিলেকশন হবে, কয় বছর লাগবে?

“আমি মনে করি, উদ্বেগজনক অবস্থায় আছি। টিকা আবিষ্কার হওয়ার পরে বাংলাদেশের মানুষ সঠিক সময়ে টিকা পাবে কি না, সেটা নিয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না।”

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন জি এম কাদের।

তিনি বলেন, “অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে কম সংখ্যায় মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। তবে এখানে আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো কৃতিত্ব দেখতে পাই না। এ কথা আমি আগেও বলেছি, এখন আরও জোর দিয়ে বলছি।

“আমাদের উপজেলা পর্যায়ে যেসব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে, সেখানে মঞ্জুরিকৃত পদে ১০-১৫ পারসেন্টের বেশি চিকিৎসক নেই। আমার বিভাগ রংপুরে বিভাগীয় হাসপাতালে সব রোগী চলে আসছে আশপাশের জেলাগুলো থেকে। সেখানে লাইফ সাপোর্ট ইউনিট নেই, সবেমাত্র হচ্ছে। ক্রিটিকাল পেশেন্টদের ঢাকায় আসতে হচ্ছে। হাসপাতালে একটা সিট পেতে তারা রাজনীতিবিদদের তদবিরের আশা করছেন। তাহলে আমরা সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য কী করলাম?”

সমস্যা সমাধানের উপায় বাতলে দিয়ে বিরোধী দলের এই নেতা বলেন, “আমি বলেছি, সেখানে ডাক্তার দিতে হবে, প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে হবে, অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে এখন যাও মরছে মানুষ, তার চেয়ে অনেক কম মারা যাবে। হয়ত কোনো মানুষই মারা যাবে না।”

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে আরও আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করছে সরকার।

এতে সমর্থন দিয়ে জি এম কাদের বলেন, “চাল যা লাগবে, তা আমদানি করে এখনই স্টক করতে হবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বাজার অস্থির হয়ে যেতে পারে যে কোনো সময়।”

জাতীয় পার্টির খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, ঢাকা বিভাগের মহাসচিব ও সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা, চট্টগ্রাম বিভাগের মহাসচিব রেজাউল ইসলাম, সিলেট বিভাগের মহাসচিব এ টি ইউ তাজ রহমান।