সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছোট ভাই আব্দুল কাদের মির্জার বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এমন কথা বলেছেন তিনি।
কাদের মির্জা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র। ওই আসনেই ওবায়দুল কাদের সংসদ সদস্য।
আসন্ন পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী কাদের মির্জার কয়েকটি বক্তব্য সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় আলোচিত হয়। এর একটিতে তাকে বলতে শোনা গেছে- ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন-চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা দরজা টোয়াই পাইতো ন (খুঁজে পাবে না)। এটাই হলো সত্য কথা।”
তার এই বক্তব্য জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এবং তাদের জোটের নেতারা।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল, নির্বাচন কমিশনকে কোলের মধ্যে বসিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনের নামে দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে।”
তবে কাদের মির্জা দাবি করেছেন, তার বক্তব্য ‘বিকৃত’ করে প্রচার করা হচ্ছে। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে বুধবার নিজের সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ওবায়দুল কাদের।
ভাইয়ের বক্তব্যের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “দেখুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এমন একটি পার্টি, এই পার্টিতে সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ দলে অপরিহার্য নয়। আমরা কেউ নিয়ম শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে নই। দল করলে দলের নিয়ম-কানুন সবাইকে মেনে চলতে হবে। দলের শৃঙ্খলা মেনে সবাইকে চলতে হবে।
“শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, দলীয় সভানেত্রীর সভাপতিত্বে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে এবং ব্যক্তিগতভাবে সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যেকোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন।”
তিনি বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই। শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে শেখ হাসিনা ব্যবস্থা নেবেন। এ ব্যাপারে আমরা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কেউ ছাড় পাবে না। এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি এটা বিশেষ কারও ক্ষেত্রে, বিশেষ ক্ষেত্রে কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার বিষয় নয় এবং সুযোগও নেই।”
সরকারের ধারাবাহিকতায় গত ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রগতির সকল সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করছে বলে জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আজ বিশ্ব সভায় উন্নয়নের রোল মডেল, অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশকে ছাড়িয়ে অগ্রগতির অভূতপূর্ব স্মারক বহন করছে। দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়নে অর্জিত হয়েছে দৃশ্যমান সফলতা।স্বাধীনভাবে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
“করোনাভাইরাসের মতো বৈশ্বিক মহামারী নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বে অনুকরনীয় রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে। শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা, সাহসিকতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা আজ বিশ্ব নন্দিত। একসময়ে তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন ফিরে পেয়েছে ঐতিহ্য। পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে প্রথম।ইলিশে প্রথম, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয়, অন্যান্য ক্ষেত্রসহ চাল উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে প্রিয় বাংলাদেশ।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “যতক্ষণ শেখ হাসিনা আছেন জনমানুষের পাশে ততক্ষণ কোনো অপশক্তিই দেশকে পিছিয়ে দিতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আর শেখ হাসিনার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”