২০১১ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ে জঙ্গি হামলার ১২তম বার্ষিকী স্মরণে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বৃহস্পতিবার বিকালে আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে ‘উপমহাদেশে ইসলামের নামে জঙ্গি সন্ত্রাসের গডফাদার পাকিস্তান’ শীর্ষক এই ওয়েবিনার হয়।
নির্মূল কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অন্যদের মধ্যে এই ওয়েবিনারে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ইতিহাসের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, কমিটির চিকিৎসা সহায়ক কমিটির আহ্বায়ক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুলসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা।
শাহরিয়ার কবির বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে গত ৪০ বছরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী এবং পাকিস্তানের আইএসআই সম্পৃক্ত। এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবল জনমত সৃষ্টি করা যাতে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করা হয়। অন্যথায় ইসলামের নামে জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসী হামলা উপমহাদেশসহ সারা পৃথিবীতে বার বার ঘটবে।”
২০১১ সালে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে পৃথক তিনটি স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ১৮ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হন।
মুম্বাইয়ে ওই বোমা হামলার নিন্দা জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, “ভারতের পক্ষ থেকে প্রামাণ্য নথিপত্র দেওয়া হলেও পাকিস্তানি সরকার লোক দেখানো কিছু বিবৃতি দেওয়া ছাড়া কোনও শাস্তি দেয়নি মুম্বাইয়ের সন্ত্রাসী হামলাকারীদের। বাংলাদেশসহ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও এ বিষয়ে সেনাবাহিনী পরিচালিত পাকিস্তান সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই।”
শাহরিয়ার কবির অভিযোগ করেন, “মুম্বাই হামলা নিয়ে ইসলামাবাদের আচরণ প্রমাণ করছে মুম্বাইয়ের ২৬/১১ হামলা ছিল পাকিস্তানের সরকারি মদদে ভয়ঙ্কর এক সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ড।
“মুম্বাই হামলা যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মদদেই হয়েছিল, সেটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও আজ স্পষ্ট। তাই হামলার মূল চক্রী, লস্কর-এ-তৈয়বা (এলইটি)-র প্রধান হাফিজ সঈদ ও তার সঙ্গীদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে ব্যস্ত ইসলামাবাদ।”
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, “জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া এখন সময়ের দাবি। কিন্তু চীনের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। পাকিস্তান চীনের অস্ত্র বিক্রির বিশাল বাজার, ফলে চীন সব সময় ভিটো দিয়ে পাকিস্তানকে রক্ষা করে।
“পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় তথা সারা পৃথিবীতে জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস রপ্তানি করছে। ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে বাংলাদেশে প্রতিটি জঙ্গি হামলার সাথে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং আইএসআই মদদপুষ্ট জামায়াত ইসলামী জড়িত।”
অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “এদেশে জঙ্গি কারা, জঙ্গিদের কারা মদদ দেয় তা আমরা জানি। ধর্ম তাদের হাতিয়ার, ‘নাস্তিকতা’ তাদের একটি অজুহাত। কাউকে নাস্তিক আখ্যা দিতে পারলে কাজটা তাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যারা কথা বলবে, আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির পক্ষে যারা কথা বলবে তারা তাদের শত্রু।
“তরুণ প্রজন্মকে আমাদের বোঝাতে হবে যে, পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, যারা পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ’৭১-এ এদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল। ওরা এখন একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমাদের দেশটা যেন ওদের মতো না হয়ে যায়।”
নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল বলেন, “শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে নির্মূল কমিটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তখনই মাঠে নেমেছিল যখন মৌলবাদীদের ভয়ে কোনো রাজনৈতিক দল মাঠে নামতে সাহস করছিল না।
“সুতরাং আবারও আমাদের সরব হতে হবে। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে আমরা আবার মাঠে নামছি। বিজয়ের মাসে আমরা স্বাধীনতার শত্রুদের রাস্তায় নামতে দেব না।”