স্বাধীনতার চেতনা দুর্নীতিতে বিলীন: গয়েশ্বর

স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনায় দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2020, 12:53 PM
Updated : 23 Nov 2020, 12:53 PM

তিনি বলেছেন, “স্বাধীনতার চেতনা কিন্তু দুর্নীতির চেতনায় বিলীন হয়ে গেছে।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সোমবার বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের এক প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে একথা বলেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর এই সময়ে যৌন নিপীড়ন এবং তাতে ক্ষমতাসীন দলের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে বলেন, “তাদের লজ্জাবোধ হয় না। যাদের লজ্জা হয় না, তাদের লজ্জা দেওয়ার ভাষা থাকে না।”

বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রহীন অবস্থা চলছে দাবি কতরে তিনি বলেন, “গণতন্ত্র শব্দের পরিবর্তে প্রতিস্থাপিত হয়েছে শেখ হাসিনাতন্ত্র। এই আদলেই দেশ চলছে।

“এই হাসিনাতন্ত্র যদি প্রতিরোধ করতে না পারেন বা পতন ঘটাতে না পারেন, তাহলে গণতন্ত্র পুনর্বাসিত হবে না।”

সাংবাদিকদের বিভক্তির প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, ঐক্য নেই বলে সংবাদকর্মীরা এখন নির্যাতনের শিকার।

“সাংবাদিকরা এক সুরে, এক কণ্ঠে কথা বলতে না বলার কারণে অত্যাচারের স্টিমরোলারটা সাংবাদিকদের উপরে যত্রতত্র হচ্ছে। শুধু আইনের ভাষায় নয়, এমনকি দৈহিক নির্যাতন এবং হত্যা-খুনের শিকারও হচ্ছেন।”

তিনি বলেন, “সাগর-রুনির ঘটনায় তো অনেক কিছু হওয়ার কথা। আমরা দেখলাম, সাগর-রুনির ঘটনার প্রতিবাদ করতে ক্ষতিপূরণ বাবদ একজন নেতা হয়ত পুরস্কৃত হয়েছেন। এই পুরস্কারের মধ্যে যদি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিরব হয়ে যায়, তাহলে তো হত্যাকাণ্ড চলবে।

“আজকে প্রথম আলোর সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান হয়ত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আমাদের বিপরীতমুখী আমার মনে হয়, তারপরেও তিনি একজন সম্পাদক, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। অন্যান্য সংবাদপত্রের যারা সম্পাদক আছেন, তারা কি তার প্রতিবাদে রাস্তায় নামছেন? নামেন নাই।”

“একজন সাংবাদিকের ওপরে আঘাত আসলে সকল সংবাদপত্রের সাংবাদিক যদি একসঙ্গে হয়, তাহলে আঘাত করতে সরকার ভয় পায়। আপনাদের মধ্যে একটা ঐকমত্য থাকা উচিত, সেই ঐকমত্যটা আমরা দেখতে পারছি না,” বলেন তিনি।

কারাবন্দি সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ, সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা রুহুল আমিন গাজী, ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলামসহ আটক সাংবাদিকদের মুক্তি এবং সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে তিন ঘণ্টার এই প্রতীক অনশন হয়।

বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, “আমাদের এই আন্দোলন শুধু আমাদের অধিকারের জন্য নয়, এটা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দি, সরকারের নির্যাতনে তারা আক্রান্ত, জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম অর্থাৎ গণতন্ত্রে ফেরার জন্য পুরো জাতির যে আকুতি, সেই আকুতির সঙ্গে একত্রীভুত হয়ে আমরা সরকার পতনের আন্দোলন করতে চাই। সরকার পতন ছাড়া সংবাদপত্রসহ কোনো কিছুই স্বাধীন হবে না, গণতন্ত্র আর ফিরবে না।”

বিএফ্ইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, “গত ১২ বছর ধরে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের জন্য অন্ধকার যুগ, জাহেলিয়াতের যুগ চলছে। গত এক যুগে ৪১ জন সাংবাদিকদের খুন করা হয়েছে। কোনোটার আমরা বিচার পাই নাই।

“সাগর-রুনির নাম আমরা এখানে বলেছি। সর্বশেষ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে নারায়ণগঞ্জে ইলিয়াস হোসেন। যুবলীগের একজনের অবৈধ গ্যাস সংযোগের সংবাদ পরিবেশন করার কারণে তাকে দিনে-দুপুরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। এর বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”

শফিউল আলম দোলন ও আল-আমিনের পরিচালনায় প্রতীক অনশনে দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির শামীমুর রহমান শামীম, বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ্ আজিজ, ডিইউজের বাকের হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, আবদুল আউয়াল ঠাকুর, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন বক্তব্য রাখেন।