‘অমানিশা’ কাটানোর প্রত্যয় নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলন

‘সময়ের ঘোর অমানিশা কাটিয়ে আলোক ছিনিয়ে আনার’ প্রত্যয় নিয়ে উদ্বোধন হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2020, 08:12 PM
Updated : 19 Nov 2020, 08:33 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে চা ও পাটকল শ্রমিকদের দিয়ে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করে ছাত্র ইউনিয়ন।

‘আলোকে চিনে নেয় আমার অবাধ্য সাহস’ স্লোগান নিয়ে এবারের জাতীয় সম্মেলনে সারা দেশ থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় বড় জমায়েতের আয়োজন করা হয়নি বলে জানান আয়োজকরা।

ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন চা শ্রমিক নেতা ও ছাত্র-যুব মঞ্চের সদস্য সচিব মুকেশ কর্মকার অনুপ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাটকল শ্রমিক নেতা এস এ রশীদ, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আসলাম খান, খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বর্তমান সহ-সভাপতি দীপক শীল, সাংগঠনিক সম্পাদক মনীষী রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ, সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈমসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। উদ্বোধনী সম্মেলন শেষে টিএসসির রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি পদযাত্রা বের করে ছাত্র ইউনিয়ন। পদযাত্রাটি শহবাগ হয়ে কাঁটাবন মোড় ঘুরে মৎস্য ভবন-প্রেস ক্লাব হয়ে রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। বিকেল ৩টা থেকে সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের দুই দিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়।

সারা দেশে ৪০০ কাউন্সিলর এ অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন এবং এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়েই ছাত্র ইউনিয়ন আগামী নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।

উদ্বোধনী বক্তব্যে মুকেশ কর্মকার অনুপ বলেন, “বর্তমানে শ্রমিকরা দুঃসময় পার করছে। সরকার দেশীয় চা-পাট শিল্পকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে এসেছে। শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। আমি তাদের মুক্তি কামনা করে আজকের সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করছি।”

মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, “দেশের মানুষ এখনও তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা ধসে পড়েছে। সারা দেশে মৌলবাদী শক্তির আবির্ভাব হয়েছে। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের তাবেদার বাহিনীতে পরিণত করেছে। নারী নির্যাতনের প্রতিবাদসহ বিভিন্ন আন্দোলন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছি আমরা।

“পুলিশ বাহিনী নেতা-কর্মীদের গলাধাক্কা দিয়ে থানায় নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছে। লং মার্চেও হামলা করা হয়েছিল। সময়ের এই ঘোর অমানিশা কাটিয়ে আলোকে ছিনিয়ে আনার প্রত্যয় নিয়ে আমরা ৪০তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করছি।”  

ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন থেকে নিচের দাবিগুলো তুলে ধরা হয়-

# অবিলম্বে ছাত্র ইউনিয়ন প্রস্তাবিত সর্বজনীন, গণমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক, একই ধারার, অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে।

# বাজেটে শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় আয়ের ৮ ভাগ বরাদ্দ দিতে হবে। সামরিকখাতসহ অনুৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ কমিয়ে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

# স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সমাজের দেওয়া ১০ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে উত্থাপিত ৯ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।

# সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ৫০% টিউশন ফি মওকুফ করতে হবে। সকল শিক্ষার্থীকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এককালীন শিক্ষাবৃত্তি দিতে হবে।

# করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

# স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিশেষ প্রণোদনা ও চিকিৎসা ভাতা দিতে হবে।

# বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মুনাফালোভী শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে।

# কৃষিভিত্তিক কারিগরি এবং ভোকেশনাল শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

# অবিলম্বে ইউজিসির ২০ বছর মেয়াদি কৌশলপত্র বাতিল করতে হবে।

# প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত কমাতে হবে। শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানোর প্রবণতা বন্ধ করতে হবে ও তাদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।

# গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।