সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “জনগণের ভোটের মাধ্যমে আর পরিবর্তনের সুযোগ নেই, যত দিন এই সরকার আছে ততদিন ভোট কেন্দ্রে সাধারণ নাগরিক যেতে পারবে না। সুতরাং একমাত্র উপায় গণঅভ্যুত্থান।”
দুই লাখ লোক যদি দুই দিন রাস্তায় থাকে, বর্তমান সরকার তখন ‘পালিয়ে যাবে’ মন্তব্য করে হাফিজ বলেন, “সেই সাহস সঞ্চয় করে আসুন আমরা আগামী দিনে এই সরকারকে বিতাড়িত করতে রাজপথে আবার নেমে আসি।”
এ সরকারের সময় যেভাবে নির্বাচন হচ্ছে, তাতে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ।
তিনি বলেন, “কেন আমরা এই ধরনের নির্বাচনে যাই? যখন নির্বাচনে যাওয়া উচিত না তখন যাই, যখন যাওয়া উচিত তখন যাই না। যেদিন সংসদে যাওয়া উচিত না সেই সংসদে গিয়ে আমরা বসে থাকি। যার জন্য আজকে বিএনপিকে চারশ ভোট দেয়।”
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যেখানে এক লাখ ৮৮ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন, সেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী পেয়েছেন ৪৬৮ ভোট।
সেই প্রসঙ্গ টেনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আরে বিএনপির এজেন্টই তো হাজারের বেশি। আমাদের কোনো এজেন্ট ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন না, কোনো ভোটার কেন্দ্রে যেতে পারে না, এমনকি আওয়ামী লীগের সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে না- এই হল বাংলাদেশের গণতন্ত্র।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কখনও ‘আপস না করলেও’ দলের অনেকে ‘আপস করে বসে আছে’ বলে মন্তব্য করেন দলটির এই ভাইস চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “আজকে দুঃখের বিষয়, খালেদা জিয়ার মত নেত্রী, তিনি বছরের পর বছর জেলে কাটালেন, আমরা কী করতে পেরেছি?”
বিএনপি আন্দোলন জমাতে না পারলেও রাজপথে ধর্মীয় মৌলবাদীদের কর্মসূচিতে বিপুল জনসমাগমের প্রসঙ্গ টেনে হাফিজ বলেন, এর মধ্যে তিনি ‘অশনি সংকেত’ দেখতে পাচ্ছেন।
“বিএনপি তো এখন ডাক দিলে রাস্তায় নামাতে পারে না। আমাদের এত শক্তিশালী ছাত্রদল ছিল, তাদেরকে রাস্তায় নামাতে পারে না। কেন তাদের নামাতে পারে না আমি জানি না। কারণ আমি এই দলের এত বিরাট নেতাও না।
“কিন্তু অন্যদিকে...। তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে। ইসলামী মৌলবাদীদের মিছিল দেখেন, তাদের সংখ্যা দেখেন রাজপথে...।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “যদি আমরা ব্যর্থ হই, এই সরকার তো যাবে, আওয়ামী জাহলিয়াতের অবসান হবেই। এই ধরনের একটা নষ্ট পচা সরকারকে বাংলাদেশের মানুষ বেশি দিন সহ্য করবে না। কিন্তু তার পরিবর্তন কীভাবে আসবে? কারা এদেরকে সরাবে- এটাই দেখার বিষয়।
“আমরা যেটা দেখতে পাব, এটা বেশি দূরে নয়। তবে এই রাষ্ট্র যদি উদার রাজনৈতিক ধারা থেকে বেরিয়ে গিয়ে আবার মোল্লাদের খপ্পরে পড়ে, এই জন্য শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ দায়ী থাকবে। আমরা এই ধরনের পরিস্থিতি চাই না। আমরা চাই, সরকার পরিবর্তন হোক ভোটের মাধ্যমে।”
পরীক্ষা ছাড়াই পরের ক্লাসে
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরকার স্কুল শ্ক্ষিার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই পরের ক্লাসে তুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারও সমালোচনা করেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বের মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হচ্ছে, কোনো দেশে পরীক্ষা ‘বন্ধ হয়নি’।
“সব দেশে পরীক্ষা হয়েছে। এই এক অভাগা বাংলাদেশ। বিনা পরীক্ষায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি দিয়ে দিল। মানে এমনই মেধাশূন্যতা এসেছে, এমনই অপদার্থের দেশ বাংলাদেশ- একটা লোক মাথা খাটিয়ে বলল না, একটা লোককে জিজ্ঞাসাও হয়ত করে নাই যে, ভাই কীভাবে আমরা পরীক্ষাটা নিতে পারি”
সরকার বলছে, দেশে করোনাভাইরাস মহামারী অনেকটা নিয়ন্ত্রণে, তাহলে পরীক্ষা কেন নেওয়া গেল না, সেই প্রশ্ন এই বিএনপি নেতা তোলেন।
তিনি বলেন, “আমাদের জাতিকে মুর্খের জাতিতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কী শিক্ষা ব্যবস্থা এদেশে এখন আছে? পরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার। এক উদ্ভট উটের পিঠে চলছে বাংলাদেশ। মেধাশূন্য করতে তারা (সরকার) এই অটোপ্রমোশন দিলেন।”
সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গও টানেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
“তাকে সারা বিশ্ব কত সন্মান করে। পৃথিবীর যেখানে যাবেন, রাষ্ট্রপতি বাড়ির বাইরে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যাবেন। আমাদের দেশে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়, তাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়, তাকে সুদখোর বলা হয়।”
“এভাবে তো দেশ থেকে মেধাবী ব্যক্তিদের বিতাড়িত করে দিয়ে মুর্খের রাজত্ব তারা কায়েক করেছে, আরো করবে ভবিষ্যতে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাতপর্য এবং গৃহবন্দি থেকে নিঃশর্ত মুক্তির করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদ’ নামে এক সংগঠন।
সংগঠনের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন খোকনের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সহ সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য একেএম আবুল কালাম আজাদ আলোচনায় অংশ নেন।