যুবলীগের কমিটিতে অনেক নতুন মুখ

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির পর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের এক বছরের মাথায় সংগঠনটির যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে নতুন মুখ দেখা গেছে।

কাজী মোবারক হোসেন নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2020, 08:51 PM
Updated : 14 Nov 2020, 08:51 PM

যারা এসব পদে এসেছেন তাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। এই কমিটিতে আছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, জনসাধারণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সোচ্চার আইনজীবী সৈয়দ সাইদুল হক সুমন। আলোচিত-সমালোচিত সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সনও সংগঠনটির সভাপতিমণ্ডলীতে স্থান পেয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষক, চিকিৎসক ও আইনজীবীও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এসেছেন।

প্রথমবার যুবলীগের কমিটিতে এসে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের বড় ছেলে শেখ ফজলে ফাহিম। তার ছোট ভাই ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম হয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ব্যারিস্টার সুমন পেয়েছেন আইন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব।

গত বছর ঢাকায় বিভিন্ন ক্রীড়া ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা ওই সব জুয়ার আসর চালান বলে সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। ক্যাসিনো কারবারে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।   

ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার অভিযোগ নিয়ে পালিয়ে যান যুবলীগের আরও বেশ কয়েকজন নেতা।

এরপর গত বছরের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসে সংগঠনটির চেয়ারম্যান করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে সামস পরশকে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরশের যুবলীগের নেতৃত্বে আসার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে আলোচিত সংগঠনটির নতুন শুরুর বিষয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠেন অনেকে।

এর এক বছরের মাথায় শনিবার যুবলীগের সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ২০১ সদস্যের  পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন।

কমিটিতে সভাপতিমণ্ডলী ও যুগ্ম সম্পাদকের পদগুলোতে বয়োজ্যেষ্ঠদের রাখা হলেও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অন্যান্য সম্পাদকের পদগুলোতে তুলনামূলক নবীনরাই ঠাঁই পেয়েছেন।

ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ এবারই প্রথম যুবলীগে এসে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। তার মতো এবারই প্রথম যুবলীগের কমিটিতে এসে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. সোহেল পারভেজ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মশিউর রহমান চপলও এবারই কমিটিতে এসে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন।

অন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে কাজী মাজহারুল ইসলাম আগের কমিটির উপসম্পাদক ছিলেন। তার আগে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসেন। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিনও বিগত কমিটিতে উপসম্পাদক ছিলেন। তিনিও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। বিগত কমিটির উপসম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. শামীম আল সাইফুল সোহাগও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।

প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র জয়দেবও এবারই প্রথম যুবলীগের কমিটিতে এসেছেন।

২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সম্মেলনে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ ফজলে সামস পরশ ও মাইনুল হোসেন খান নিখিল; এর এক বছর পর সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হল।

দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বিগত কমিটিতেও ছিলেন। এর আগে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন।

যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের দেখে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন সংগঠনটির সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি নতুন কমিটির সকলকে অভিনন্দন জানাই। আমি মনে করি, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে সামস পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান নিখিলের নেতৃত্বে যে কমিটি হয়েছে তা সময়োপযোগী কমিটি। এই কমিটিতে কিছু সাবেক ছাত্রনেতাদের নেওয়ায় আমি মনে করি, তারা যুবলীগকে আধুনিক ও যুগোপযোগী সংগঠনে রূপান্তর করতে পারবে।”

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বদিউল আলম বলেন, “ছাত্রলীগ থেকে বিদায় নিয়েই বেশিরভাগ নেতারা যুবলীগ করতে আসে। আমার চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক মাননীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে এই কমিটি করেছেন। এখানে সাবেক ছাত্র নেতাদের বেশি আসাকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি।”

ফজলে ফাহিম ও নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে সভাপতিমণ্ডলীতে আছেন অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মনজুর আলম শাহীন, আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, শেখ সোহেল উদ্দিন, ডা. খালেদ শওকত আলী, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. নবী নেওয়াজ, আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, মো. এনামুল হক খান, সাজ্জাদ হায়দার লিটন, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, মৃণার কান্তি জোয়ার্দার, তাজউদ্দিন আহমেদ, জুয়েল আরেং, মো. জসিম মাতুব্বর, মো. আনোয়ার হোসেন ও এন শাহাদাত হোসনে তাসলিম।

শেখ ফজলে নাঈমের সঙ্গে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা, সুব্রত পাল, মো. বদিউল আলম ও মো. রফিকুল আলম জোয়ার্দার।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বাকি তিনজন হলেন- মো. জহির উদ্দিন খসরু, আবু মুনির মো. শহিদুল হক রাসেল ও অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল কবির।

অন্য সম্পাদকের পদগুলোর মধ্যে গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক হয়েছেন মো. জহিরুল ইসলাম মিল্টন, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহদাত হোসেন, শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আলী আসিফ খান রাজিব, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কাজী সরোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জি. মো. শামীম খান, তথ্য ও যোগাযোগ (আইটি) বিষয়ক সম্পাদক মো. শামসুল আলম অনিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. ফরিদ রায়হান।

তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মীর মো. মহিউদ্দিন, জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শাহীন মালুম, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. নিজামউদ্দিন চৌধুরী পারভেজ, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. হ্যারিস মিয়া শেখ সাগর, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. আব্দুল হাই, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মো. হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মো. আব্দুল মুকিত চৌধুরী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাও. খলিলুর রহমান সরদার এবং মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন অ্যাড. মুক্তা আক্তার।