আওয়ামী লীগ আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনও হবে না: ফখরুল

সাম্প্রতিক দুই উপনির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কখনোই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2020, 07:59 AM
Updated : 14 Nov 2020, 07:59 AM

ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং পুনঃভোটের দাবিতে শনিবার জাতীয় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার থাকলে কখনও কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন চাই।

“সেজন্য সরকারকে বলব, পদত্যাগ করুন। অন্যথায় প্রত্যেকটি স্বৈরাচার, প্রত্যেকটি কর্তৃত্ববাদী সরকার যেভাবে বিদায় হয়েছে আপনাদেরকে জনগণের উত্তাল আন্দোলনের বিদায় হতে হবে।”

দুই উপনির্বাচ বাতিলের পাশাপাশি গ্রেপ্তদা নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবিতে শনিবার সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি ডাকে বিএনপি; কেন্দ্রীয় সমাবেশ হয় ঢাকায়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে সারা পৃথিবী জানে, বাংলাদেশে একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার, একটা একনায়ক সরকার, একটা ফ্যাসিবাদী সরকার অধিষ্ঠিত হয়ে আছে।

“আমাদের কথা নয়, আমেরিকান ৭/১০ জন সেনেটর চিঠি দিয়েছে সিনেট প্রধানের কাছে, বাংলাদেশে আজকে বেআইনিভাবে বিনা বিচারের প্রায় ৪০০ লোককে হত্যা করা হয়েছে।”

বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এক লাখের বেশি মামলার কথাও বলেন তিনি।

“কারণ একটাই, বিরোধী দলকে এখান থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। এখানে ভিন্নমত রাখা যাবে না। আজকে পত্র-পত্রিকা কিছু লিখতে পারে না, সাংবাদিকদের জেল দিয়ে দিচ্ছেন, সাংবাদিকদের হত্যা করছেন।”

উপনির্বাচনের দিন রাজধানীতে বাসে আগুন লাগানোর ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, বিএনপি কোনো সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

“আমরা বিশ্বাস করি যে, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হবে। অন্য কোনোভাবে আমরা সরকার পরিবর্তনের কথা চিন্তাও করি না।”

আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, “শুধু নির্বাচনী ব্যবস্থা নয়, পুরো গণতন্ত্রকে তারা ধবংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের বংশবদ অযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

“যতগুলো নির্বাচন এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, প্রত্যেকটা নির্বাচন তাদের পক্ষে লুট করে নিয়ে গেছে এবং জনগণের আস্থা এই নির্বাচন ব্যবস্থার উপর ক্রমেই শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে।”

ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের হার দেখিয়ে তিনি বলেন, “এত সন্ত্রাস, এত কারচুপি, এত ভয়ভীতি প্রদর্শন করার পরেও এখানে ১৪ শতাংশের বেশি ভোট তারা (নির্বাচন কমিশন) দেখাতে পারেনি।”

বাংলাদেশের নির্বাচন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শেখার আছে বলে মন্তব্যের জন্য সিইসি কে এম নূরুল হুদার সমালোচনাও করেন ফখরুল।

“কী হাস্যকর, কী অদ্ভুত কথা এবং কী লজ্জার কথা। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) ৫ দিনেও ফলাফল ঘোষণা করতে পারে না, এটা আমরা ৫ মিনিটে পারি। এটা তো পারবেন এজন্যই যে, আপনাদের ফলাফল আগে থেকে তৈরি করা থাকে।

“এই নির্বাচন কমিশন তাদের লজ্জা-শরমও করে না, তাদের হায়া বলে কিছু নেই। যদি থাকত, অনেক আগেই তারা পদত্যাগ করে চলে যেত।”

এই পরস্থিতি বদলাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, রফিকুল ইসলাম, আকরামুল হাসান, ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর বক্তব্য রাখেন।