ভোটের ফল বাতিল দাবিতে বিক্ষোভ করবে বিএনপি

ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ‘মিথ্যা মামলায়’ গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2020, 12:00 PM
Updated : 13 Nov 2020, 12:00 PM

শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং রোববার সারা দেশে জেলা সদরে তাদের প্রতিবাদ সমাবেশ হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার বিকালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “গতকাল একেকটা সেন্টারের সামনে ২-৩-৪-৫ শ করে বাইরের থেকে লোকজন এনে দাঁড় করে রেখেছে, যেই যাচ্ছে তাকে বের করে দেয় মেরে। এখানে নির্বাচনের নরমাল যে পদ্ধতি এর কোনো কিছুর সুযোগ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বলুন আর যারা দেশ চালাচ্ছে তারা রাখেনি। সবচেয়ে বড় কথা পুলিশ এসব অপকর্মে সহযোগিতা করেছে।

“আওয়ামী লীগ নানা মিথ্যাচার করবে এই নির্বাচনকে জাস্টিফাই করার জন্য। কিন্তু কোনোভাবে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”

ঢাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের পেছনে ‘সরকারের এজেন্টরা’ রয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। সেখানে এ ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, যুব দলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, ছাত্র দলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নিন্দা জানান তিনি। একইসঙ্গে গতরাত থেকে রাজধানীতে নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি তল্লাশি ও ‘অনেককে তুলে নেওয়ার’ ঘটনায় উদ্বেগ জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “কালকে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। এই ধরনের ঘটনা গণতান্ত্রিক পরিবেশকে সাহায্য করে না, ক্ষতিগ্রস্ত করে। সে বিষয়ে আমরা যতটুকু খবর পেয়েছি, একটি টিভি চ্যানেলেও খবর প্রকাশ হয়েছে যে, সরকারি দলের ছাত্রলীগের এক ছেলেকে গতকালের ঘটনায় গ্রেপ্তারও করা হয়েছে এবং সে বলেছে যে, তাকে পয়সা-টয়সা দিয়ে নিয়ে এসছে আওয়ামী লীগের লোকেরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই খবরটি প্রকাশ হয়েছে।

“এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, যে উপনির্বাচনটা হল এটা একেবারেই নির্বাচন হয় নাই। এটা একটা পাতানো ও জালিয়াতির নির্বাচন হয়েছে, সেটা থেকে জনগণের দৃষ্টিকে দূরে রাখার জন্য এই বাস পোড়ানোর ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে সরকারের একটা পরিকল্পনা যে নির্বাচন প্রক্রিয়াটা ধ্বংস করা এবং দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, তারই নমুনা আমরা দেখতে পারছি।”

ঢাকা-১৮ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীরের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, “গতকাল বিভিন্ন কেন্দ্রে আমাদের প্রার্থী নিজে এবং তার প্রধান এজেন্ট আবদুস সালাম গেছেন সেখানে তারা দেখেছেন, কেন্দ্রে ভোটারদের কোনো উপস্থিতি ছিল না। ভোটারদের বের করে দিয়ে তারা সন্ত্রাসীদের জড়ো করেছে। আমাদের প্রার্থীদের সেন্টারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি- এটা আমরা মিডিয়াতে দেখেছি।

“এটা কোনো নির্বাচন হয়নি, এটা একটা তামাশার নির্বাচন হয়েছে। সরকার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের যৌথ প্রযোজনায় এই উপনির্বাচন ভোট ডাকাতির নির্বাচন হয়েছে, তামাশা হয়েছে। সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের যা কিছু করা দরকার, তারা সেটাই করেছে।”

সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সেলিম রেজার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, “বিএনপির ভোটার কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছে তাকে ফিঙ্গার প্রিন্ট যেটা মেরে নিয়ে বলেছে যে, এবার আপনি চলে যান। অর্থাৎ বাটন চাপ দেবে নৌকা প্রতীকে, সেই ভোট চলে যাবে নৌকায়। এভাবে তারা ভোট ডাকাতি, ভোট ছিনতাই করেছে। এটা এবার নতুন স্টাইল চালু করেছে।

“আজকে এসব নির্বাচন থেকে আবার নতুন করে প্রমাণিত হল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নাই, ওই রকম সরকার ছাড়া নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। আমি আশা করি, আগামীতে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নাই।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।