বাস পোড়ানো ‘সরকারি এজেন্টদের’ নাশকতা: ফখরুল

রাজধানীতে বাস পোড়ানোর ঘটনা সরকারি এজেন্টদের ‘নাশকতা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2020, 09:20 AM
Updated : 13 Nov 2020, 09:34 AM

শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের যে অভিজ্ঞতা আপনারাও জানেন, দেখা যায় যে, সরকারের কিছু কিছু অংশ যারা বিভিন্নভাবে কাজ করে, কেউ কেউ স্যাবোটাজ করার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, বিএনপি এই রাজনীতি করে না।”

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের সাগর-রুনি মিলনায়তনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি মহাসচিব।

বৃহস্পতিবার ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলার মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত নয়টি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ভোটগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করতেই এ নাশকতা বলে পুলিশের দাবি। বাস পোড়ানো ও মিছিলের ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করে শুক্রবার নয়টি মামলা হয়েছে।

বিএনপিকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়েরের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমি তীব্রভাষায় এর নিন্দা করছি। আমরা যারা রাজনীতি করি তারা সবসময় শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজ করি। এগুলো কখন হয় যখন দেশে কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস থাকে না।

“আপনি একটা মিছিল করতে পারবেন না, কোথাও গিয়ে সভা করতে পারবেন না- এসব অনেকদিন ধরে হয়ে আসছে।যার ফলে অনেক সময় এই ধরনের যারা দুস্কৃতিকারী তারা এই সুযোগগুলো নিয়ে এসব ঘটায়।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের দেশনেত্রী দুই বছর ধরে জেলে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব দেশের বাইরে। এরকম একটা কঠিন সময়ে কিন্তু আমাদের ঐক্য অটুট আছে। এই ধরনের দলে যেটা হয় কেউ কেউ পদত্যাগ করে যায়…। এখনও দলের মধ্যে কোনো ভাগ হয়নি। আমাদের দল চলে যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে।”

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি যে, উনি (খালেদা জিয়া) অ্যাকটিভ আছেন মানসিকভাবে। তার যে অস্তিত্ব দেশের মানুষের মধ্যে, এটা অত্যন্ত গভীরে। আমরা মনে করি, উনি রাজনীতিতে আছেন এবং থাকবেন। অবশ্যই উনি অ্যাকটিভ হবেন।”

এক প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাহেব বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য অন্তরায়। আসলে প্রধান অন্তরায় তো তারা। ১৯৭৫ সালে বাকশাল তৈরি করে গণতন্ত্রকে কবর তো দিয়েছিলেন তারা। দেয়ার ইজ নো ডেমোক্রেসি। তার আগের থেকে ১৯৭২ সালে তারা যে সংবিধান তৈরি করেছিল সেই সংবিধান তারাই পরিবর্তন করেছেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, জরুরি অবস্থা, বাকশাল পরপর তিনটা করে মানু্ষের সমস্ত অধিকার তারা কেডে নিয়েছে-এটা রিয়েলিটি।

“উনারা ক্ষমতায় আসার পর কী করলেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান ছিল সেটাকে বাতিল করলেন, একেকটা আইন তৈরি করেছে সেগুলোর একটাও গণতন্ত্রের পক্ষের আইন না, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ অন্যান্য যেসব আইন আছে…। জনগণের যে কথা বলার অধিকার তাকে হরণ করেছে সরকার।”

দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর প্রকাশিত অডিও সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি এটা শুনিনি, জানিও না। তবে যেটা যেখানে যেভাবে আসুক, এগুলো আমরা সমর্থন করি না। এগুলোর পেছনে সরকারের হাত সবসময় থাকে, যারা এটাকে মেনিপুলেটেড করে।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচন এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। গতকাল ঢাকা-১৮ নির্বাচনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তিনি বললেন, এই কমিশন এতো ভালো যে, আমেরিকার তাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। আমেরিকায় ৪/৫ দিন লাগে ফলাফল গুণতে আর তারা ৪/৫ মিনিটে ফলাফল দিয়ে দিতে পারে। এর চেয়ে হাস্যকর কথা… একজন সিইসির কাছ থেকে আসতে পারে এটা কল্পনাও করতে পারি না।”

তিনি বলেন, “আমাদের পলিটিক্যাল এজেন্ডা এখন একটাই।দেশে এখন প্রকৃত জনগণের সরকার, জনগণের সংসদ গঠন করার জন্য একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের তৈরি করে সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এটা না হলে কোনো সমস্যারই সমাধান হবে না।”

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে মিট দ্য প্রেসে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি মহাসচিবকে রিপোর্টার্স ইউনিটির ক্রেস্ট উপহার দেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।