যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান ফখরুলের

সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিতে বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2020, 10:05 AM
Updated : 10 Nov 2020, 01:35 PM

ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা তুলে ধরে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সরকার অবৈধ সরকার, তারা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বেআইনিভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছে, গণতন্ত্রের সব সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। কিন্তু এটা শেষ নয়।

“তাদের দেখা উচিত, তাদের এই নির্বাচন (যুক্তরাষ্ট্রের) থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত আওয়ামী লীগের এবং যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করছেন তাদের।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমেরিকার নির্বাচনের যেরকম… যারা অথরিটি, তারা দেখেন, সমস্ত চাপের মুখেও তারা কিন্তু অবিচল থেকেছে। সেই অবিচল থেকে তারা জনগণের যে রায় সেটাকে আপহোল্ড করেছে- দ্যাট ইজ ডেমোক্রেসি, এটাই গণতন্ত্র।”

তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যদি না থাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। প্রতিষ্ঠানকে নিরপেক্ষ হতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, শক্তিশালী হতে হবে, বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, শক্তিশালী হতে হবে, প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। আজকে এই আওয়ামী লীগ, যারা বার বার ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে পরিকল্পিভাবে, আত্মম্ভরিতা করে, অহংকার করে, এমন এমন কথা বলে, যার এখন নাম বলতে চাই না, তাদেরকেও ছাড়িয়ে যায়।”

সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “আপনারা তো অন্ধকারে আছেন। দেখতে পারছেন না আপনার চারদিকে কি অবস্থা, মানুষের মধ্যে কি চলছে, তাদের চোখের ভাষা আপনারা পড়তে পারছেন না, দেওয়ালের লিখন আপনারা দেখতে পারছেন না। আপনারা সেই অন্ধকার গহ্বরের মধ্যে বাস করছেন। সেই সাথে দেশকে টেনে নিয়ে গেছেন ওদিকে, জাতিকে টেনে নিয়ে গেছেন ওদিকে।”

বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করা আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই বংশবদ নির্বাচন কমিশনের যে প্রতিষ্ঠান নেই, সেই প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, এখানে প্রশাসনকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করা হয়েছে। কোনো চাকরি হয় না- ডিএনএ টেস্ট না করে। অর্থাৎ বিএনপির কোনো গন্ধ থাকলে তার চাকরি হয়না। অন্যসব জায়গাতে ঘটছে, সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে একই ঘটনা এখন পর্যন্ত চলছে। আনওয়ানটেড, আনফরচুনেট ইনসিডেন্ট।”

ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ উপনির্বাচন প্রসঙ্গ

মির্জা ফখরুল  বলেন, “গত রাতেও উত্তরায় তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) আমাদের নেতাদের বাড়ি বাড়ি গেছে, সাহাবুদ্দিন সাগর আমাদের সভাপতি (দক্ষিণখান থানা) তার বাড়িতে গিয়ে এক পুলিশ অফিসার পিস্তল ধরে তার স্ত্রীকে বলেছেন, ‘তাকে বলবেন যে, সে যেন বাড়ি না আসে। তা না হলে গুলি করে মেরে ফেলব’।একটু আগে খবর পেলাম, অফিসের পিয়নকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তারপর আবার ছেড়েছে। এরকম ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। তারপরও কিন্তু হাজার হাজার মানুষ বেরিয়ে প্রচার করছে।

“সিরাজগঞ্জে প্রার্থীকে তিনদিন আটকে রেখেছে, তারপরে অনেক চেষ্টা করে বের হয়েছে। এখন তাকে বেরও হতে দেয় না। ওখানে তো মহাশক্তিশালী, প্রভাবশালী প্রয়াত নাসিম (মোহাম্মদ নাসিম) সাহেবের ছেলে নির্বাচন করছে, তারা তো ওখানে কাউকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না, এমন ত্রাসের রাজত্ব তারা সৃষ্টি করেছে কেউ সাহস পাচ্ছে না।”

ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীরের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান নানা ঘটনা তুলে ধরে বলেন, “তারা (আওয়ামী লীগ) নিজেদের ক্যাম্প নিজেরা পুড়িয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, বাড়ি বাড়ি পুলিশ যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস জ্বালাবে বিএনপি- এটা কেউ বিশ্বাস করে?”

সিরাজগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী সেলিম রেজার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, “সর্বক্ষণ আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে, প্রচারনা করতে দিচ্ছে না। এজেন্টদেরকে অলরেডি হুমকি দিচ্ছে।তাহলে আমরা কীভাবে এজেন্ট দেব? এজেন্ট দেব লিস্ট নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে আক্রমণ। যারা ভোটার, তাদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি। এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে আমরা আছি। গণমাধ্যমের কাছে অনুরোধ থাকবে- বাংলাদেশের মানুষ আজকে আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে- গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আপনারা ভূমিকা পালন করবেন।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সাইদুর রহমান বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন।