জেলহত্যার কুশীলবদের স্বরূপ উন্মোচনে গবেষণার আহ্বান

পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের স্বরূপ উন্মোচনে গবেষণার আহ্বান এসেছে আওয়ামী লীগ আয়োজিত একটি ওয়েবিনার থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2020, 08:18 PM
Updated : 7 Nov 2020, 07:04 PM

পাশাপাশি পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায় এসে যারা বাংলাদেশকে বিপথে পরিচালিত করতে চেয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা সদস্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিল তাদেরও মুখোশ উন্মোচনে জাস্টিস কমিশন গঠনের প্রস্তাব এসেছে এই সেমিনার থেকে।

শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের আয়োজনে ‘রক্তাক্ত নভেম্বর: কিছু ঐতিহাসিক বাস্তবতা’ শিরোনামের ওয়েবিনারে যুক্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন, লেখক ও গবেষক সৈয়দ বদরুল আহসান, জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ সাফায়েত ইসলাম, সাংবাদিক জায়েদুল আহসান পিন্টু। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন সুভাষ সিংহ রায়।

সৈয়দ সাফায়েত ইসলাম বলেন, “পনের অগাস্ট থেকে সাত নভেম্বর, ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায়। সেদিনের সেসব কুশীলবরা এখনও বেঁচে আছেন, যারা পেছন থেকে সব কলকাঠি নেড়েছিলেন। সেসব অধ্যায় যত পেছনে হোক না কেন, তাদের কালো মুখোশ উন্মোচন করা উচিৎ।

“আমাদের সামনে আজকে যে বাস্তবতা, আমরা কি ওই দিনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছি? আমরা কি সেদিনের ঘটনা বাস্তবিকভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছি? নতুন প্রজন্মের কাছে বিষয়গুলো নিয়ে যেতে পেরেছি কি না- এটাও বিবেচ্য বিষয়।”

পঁচাত্তরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর নব্বইয়ের দশকে মেজর জেনারেল হয়ে সৈয়দ সাফায়েত ইসলাম পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের নানা দলিলপত্র খুঁজেছিলেন সেনা দপ্তরে। কিন্তু তত দিনে সব নথি নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন)

মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ধারাবাহিকতাতেই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। খুনিরা জানতেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে যে চার নেতা দেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন তারা বেঁচে থাকলে আগামীতে বাংলাদেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারবেন।”

নতুন প্রজন্মের কাছে পঁচাত্তরের ইতিহাস উপস্থাপনে ভূমিকা রাখার জন্য ইতিহাস গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান ডা. মোস্তফা জালাল।

“কৈ মাছকে তো শাক দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে না। তেমনিভাবে সঠিক ইতিহাস একদিন সামনে আসবে। আমু ভাই, সেলিম ভাই, তোফায়েল ভাইরা লিখছেন। তাতে আরও কিছু প্লাস করে আমরা যেন নতুন প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে পারি।”

লেখক-সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান)

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, “খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমানের পাশাপাশি তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, মাহবুব আলম চাষীদের ভূমিকা কী ছিল, তাও গবেষণা করতে হবে। পনের অগাস্টের পর তিন ও সাত নভেম্বরে হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের অনেকে মারা গেছেন। তাদের মরণোত্তর বিচার করতে হবে। সেদিনের সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন অনেক সেনা সদস্য। তাদের ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাদের বিষয়েও গবেষণা করতে হবে। তাদের বিচার করতে হবে।”

আলোচনার শুরুতে সাংবাদিক জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ড কি শুধই ১২ জন সেনা কর্মকর্তা করেছিলেন? এ হত্যার পেছনে আর কারা ছিলেন?

“জিয়াউর রহমানের আমলে যারা গণফাঁসির শিকার হয়েছিলেন, সেসব ফাঁসির সাক্ষীদের বয়ান নিয়ে জাস্টিস কমিশন গঠন করা দরকার।”