কৃষক-শ্রমিকদের জিজ্ঞাসা করেন, তারা কেমন আছে: ফখরুল

জনগণকে জিম্মি করে সরকার দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2020, 09:30 AM
Updated : 5 Nov 2020, 09:30 AM

বিএনপিনেতা তরিকুল ইসলামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি বলেন, “আজকে কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে তারা? আপনারা দেখবেন, দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বি হয়েছে। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম তিন-চারগুণ পাঁচ গুণ হয়ে গেছে। কাদের জন্য? তাদের লুটপাটের জন্য। তারা সিন্ডিকেট তৈরি করছে, সিন্ডিকেট তৈরি করে তারা সব মুনাফা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।

“বেতন বাড়াচ্ছেন কাদের? সরকারি কর্মকর্তাদের। তিনগুণ-চারগুণ বেতন বাড়ি্য়েছেন। আর আমার কৃষক ভাইয়ের কী আয় বেড়েছে, শ্রমিক ভাইয়ের কী আয় বেড়েছে, আমাদের যারা ক্ষুদে ব্যবসায়ী তাদের কী আয় বেড়েছে? এই করোনাতে তারা প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছে। বহু মানুষ আছে যারা দুই বেলা খেতে পায় না। আজকে সেই অবস্থা আপনারা তৈরি করেছে। আপনারা মানুষগুলোকে জিম্মি করে ফেলেছেন এবং তাদের আপনারাই অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।”

জিডিপির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “ওদের (সরকার) খারাপ লেগেছে আমি বলেছিলাম যে, আপনারা মিথ্যা কথা বলছেন উন্নয়নের কথা বলে, জিডিপি সম্পর্কে...। খারাপ লাগার তো কিছু নেই- দ্যাটস এ রিয়েলিটি। আপনারা যেকোনো অর্থনীতিবিদের কাছে যাবেন যিনি নিরপেক্ষ, আপনাদের উচ্ছিষ্টভোগী নয়, তাদের কাছে যাবেন, তারা আপনাকে বুঝিয়ে বলে দেবেন।

“আপনি যেকোনো কৃষকের কাছে যান, আপনি রিকশাচালক ভাই, শ্রমিক ভাইয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন যে, তারা কেমন আছেন? তার কোনো উন্নয়ন হয়েছে? উন্নয়ন হয়েছে আপনাদের, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রত্যেকদিন কথা বলেন। অত্যন্ত সুবেশী মানুষ। চমৎকার একটা ঘরের মধ্যে চমৎকার একটা আসনের মধ্যে বসে খুব সুন্দর করে কথা বলেন। আমি শুনেছি তিনি ছাত্রজীবনে নাটক করতেন। আমিও নাটক করেছি একসময়। উনি সুন্দর করেই বলেন, একটাই বক্তব্য, প্রতিপাদ্য একটাই যে, বিএনপির এই নাই, বিএনপির ওই নাই-এসব।

“বিএনপি তো উনাদের কাছে নাই, উনারা বলছেন বিএনপি নাকি সংকটে পড়েছে, বিএনপিতে অন্ধকার। তাহলে মুখে সারাক্ষণ বিএনপি কেন- আমার প্রশ্ন ওই জায়গায়। আপনার মু্খে এতো আলো কেন বিএনপির? কারণ আপনারা জানেন যে, বিএনপি হচ্ছে একমাত্র দল, যে রাজনৈতিক দলটি গণতন্ত্র আনতে পারে, অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে। আপনারা যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছেন তার অবসান করতে পারে।”

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “তরিকুল ইসলাম কিশোরকাল থেকেই প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনীতি করতেন, আগাগোড়া একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিশ্বাসী ছিলেন। সেই কারণে তিনি সর্বমহলের সর্বজনের মধ্যে তিনি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আস্থাশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

“তরিকুল ইসলাম ঢাকায় চলে আসতেন আগেই। তিনি পথে-প্রান্তরে বিভিন্ন শ্রেণির নেতাকর্মীদের সাথে মিছিল-মিটিং যোগ দিতেন। অর্থাৎ জনমুখী বা গণমুখী হতে হলে রাজনীতির কর্মসূচি পালনের মধ্যে যদি আমরা পথে না চলি, পথের সাথে না থাকি তাহলে পথ খুঁজে পাব না। আজকে সেই কারণেই বলব, তরিকুল ইসলামের আদর্শ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমিও তার জীবনের অনেক কিছু অনুসরণ করার চেষ্টা করি।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে তরিকুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত স্মরণসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মশিউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম। বুধবার যশোরে মরহুমের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, দোয়ার মাধ্যমে তাকে স্মরণ করেছেন দলের নেতাকর্মীরা।