কতটা দায়িত্বহীন হলে জনগণের সাথে মিথ্যা বলে: ফখরুল

দেশের অর্থনীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচারের’ অভিযোগ এনেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2020, 09:11 AM
Updated : 30 Oct 2020, 09:11 AM

শুক্রবার ঢাকায় এক সেমিনারে তিনি বলেছেন, “আজকে ভারত স্বীকার করে যে, তাদের প্রবৃদ্ধি ১০ পারসেন্ট কমে গেছে। আর এরা (বাংলাদেশ সরকার) বলছে মিথ্যা কথা...। জাস্ট ইমাজিন। একটা সরকার কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে জনগণের সাথে মিথ্যা কথা বলে।”

মহামারীর কারণে বিশ্বের অন্যসব দেশের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিও বড় ধাক্কা খেয়েছে। সরকারি হিসেবে গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, যেখানে আগের অর্থবছর তা ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ ছিল।

অবশ্য এবারের প্রবৃদ্ধির অংক আরও কম হওয়ার কথা বলে অনেক বিশ্লেষকের ধারণা। বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের মত আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর প্রাক্কলন ছিল এর চেয়ে অনেক কম।

সে প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার ‘সম্পূর্ণভাবে জনবিচ্ছিন্ন’ বলেই সঠিক তথ্য দেওয়ার দায়িত্বশীলতা ‘তাদের নেই’।

“প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা মিথ্যাচার করছেন। প্রণোদনা... আমরা প্রথমেই বলেছিলাম এটা শুভঙ্করের ফাঁকি। এটা তারা দিচ্ছেন ব্যাংক থেকে। যাদেরকে টাকাটা দেবে, যারা পাবে... ব্যাংক যদি খুশি হয়, তারা সন্তুষ্ট হয়, তাহলেই।

“ফলে কী হয়েছে? যারা সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, যারা ব্যাংকের সঙ্গে বিভিন্ন লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, তারা কিন্তু এই প্রণোদনা পাচ্ছে না।”

ফখরুল বলেন, দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ও গ্রামীণ অর্থনীতি ‘ভয়াবহ’ অবস্থায় পড়লেও সরকার বিষয়টি ‘ঢেকে রাখছে’।

“আমার কাছে মনে হয়, সচেতনভাবে তারা এদেশের অর্থনীতিকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য, এটাকে পরনির্ভরশীল করে দেওয়ার জন্য...।”

এগ্রিকালচারিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব) এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘কোবিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের কৃষি সেক্টরে কৌশল নির্ধারণ’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়।

ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক একে ফজলুল হক ভুঁইয়া সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়েন।

‘চারদিকে কোভিডে আক্রান্ত’

সেমিনারে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের সময় চারদিকে ‘দুর্নীতি’ ছাড়া আর কিছু তিনি দেখেন না। এমনকি স্বাস্থ্যখাত নিয়েও সরকার ‘সঠিক তথ্য দেয় না’।

“একটা কথাও সত্য বলে না। সরকারি যে ভাষ্য দেয়, সেই ভাষ্যের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। আমি তো আমার চতুর্দিকে দেখি যে সবাই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। আমার ভাই হয়েছে আক্রান্ত, আমার চাচা হয়েছে, খালা হয়েছে...।

“খবর নিয়ে দেখবেন যে খুব কম পরিবার আছে, যাদের কেউ আক্রান্ত হননি। একটা পরিবারে ঢুকলে তাদের সবার হয়ে যায়।”

ঢাকা উত্তরের মেয়রের করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার প্রসঙ্গ ধরে ফখরুল বলেন, “তার গোটা পরিবারের ১৯ জন একসাথে গেছে হাসপাতালে, একসাথে বেরিয়ে আসছে। তারপরেও তারা বলবেন যে দিনে এক হাজার, ১৯শ আক্রান্ত, সংক্রামিত হচ্ছে।

“বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জেলাগুলোতে এখন কোনো টেস্ট হয় না। ট্রাম্পের যে কথা ছিল- নো টেস্ট নো করোনা। এখন নো টেস্ট নো করোনা হচ্ছে।”

‘বিএনপি প্রবলভাবে আছে’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “দেখেন, আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগে, তারা যখন বলেন যে, বিএনপি নেই, বিএনপি নাকি একেবারে শেষ হয়ে গেছে, নিঃশেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের সারাদিন, প্রত্যেকদিন শুধুমাত্র একটাই কাজ, বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলা।”

কাদেরের উদ্দেশে তিনি বলেন, “দেশের অর্থনীতি বা আপনার দলকে কীভাবে এগিয়ে নেবেন- সেই সমস্ত কথা না বলে আপনি তো শুধু দুইটা কথা বলেন। এটা হচ্ছে শেখ হাসিনা, আরেকটা হচ্ছে বিএনপির বিরুদ্ধে। দ্যাট মিনস বিএনপি এত বেশি করে আছে, এতো প্রবলভাবে আছে যে আপনাকে প্রত্যেক দিন এই কথা বলতে হচ্ছে।”

গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলার অধিকার আওয়ামী লীগের ‘নেই’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এক-এগারো তো তোমরা করিয়েছ। তোমরা বলেছ যে, এক-এগারোর সরকার তোমাদের আন্দোলনের ফসল এবং তাদের সকলকে তোমরা বৈধ্যতা দিয়েছ।

“আজকে কোন মুখে তোমরা গণতন্ত্রের কথা বল, কোন মুখে তোমরা জনগণের অধিকারের কথা বল। যারা জনগণের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নেয়, যারা জনগণকে শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, জনগণকে মিথ্যা কথা বলে, প্রতারণা করে, তারা বলে গণতন্ত্রের কথা!”

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে ‘দেউলিয়া হয়ে গেছে’ বলেই এখন তাদের ‘গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আসুন না, নরমাল ইলেকশন করুন, ফেয়ার ইলেকশন করুন। আপনারা কোথায় কে টিকে আছেন, কোথায় কি জনগণের দরদী হয়ে গেছেন- দেখা যাবে।”

এই অবস্থার শেষ ‘একদিন হবে’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ কোনোদিনই পরাধীনতা মেনে, তাদের অধিকার হারিয়ে নিশ্চুপ থাকেনি। হয়ত সময় লেগেছে, কিন্তু সেই সময়ের অবসান হয়েছে।”

বিএনপি নেতাকর্মীদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, “হতাশা দিয়ে কখনোই লড়াই জয় করা যায় না।... সামনে সেই আশার লক্ষ্য রাখতে হবে। সূর্য উঠবেই, গণতন্ত্রের সূর্য, জনগণের সূর্য উঠবেই।”

জনগণকে সচেতন করে তাদের নিয়েই ‘গণতন্ত্রের পথে’ এগিয়ে যাওয়ার জন্য এগ্রিকালচারিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

এ্যাবের আহ্বায়ক রাশিদুল হাসান হারুনের সভাপতিত্বে ও কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের পরিচালনায় সেমিনারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ইব্রাহিম খলিল, অধ্যাপক জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক মো. আব্দুল করিম, অধ্যাপক শামসুল আলম ভূঁইয়া, অধ্যাপক শওকত আলী, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক বক্তব্য দেন।