হায়দার আনোয়ার খান জুনো আর নেই

কমিউনিস্ট নেতা, মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আনোয়ার খান জুনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2020, 08:00 AM
Updated : 29 Oct 2020, 09:05 AM

তার মেয়ে অনন্যা লাবণী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তার বাবার মৃত্যু হয়।

নিউমোনিয়ার মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হওয়ায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে ৭৬ বছর বয়সী জুনোকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৪ সেপ্টেম্বর নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে।

সেখানে অবস্থার ক্রমাবনতি হতে থাকলে ২২ অক্টোবর স্কয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় যোগাযোগ করে হায়দার আনোয়ার খান জুনোর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছিলেন বলে অনন্যা লাবণী জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “বাবা নরসিংদীর শিবপুরে যুদ্ধ করেছিলেন। সে এলাকার অনেক মানুষ বাবাকে শেষবার দেখতে চান। তাদের অনুরোধে আমরা আজকে মরদেহ বারডেম হাসপাতালের মরচুয়ারিতে রাখার পরিকল্পনা করেছি। আগামীকাল শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার কথাও ভাবছি।”

শুক্রবার বাদ জোহর জানাজা শেষে হায়দার আনোয়ার খান জুনোকে বনানী কবরস্থানে তার বাবা-মায়ের কবরে সমাহিত করা হবে বলে জানান তার মেয়ে। 

কমিউনিস্ট নেতা হায়দার আকবর খান রণোর ছোট ভাই জুনোর জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কলকাতায়। তাদের পৈতৃক নিবাস নড়াইলের বরাশুলা গ্রামে। বাবা হাতেম আলী খান ছিলেন একজন প্রকৌশলী। প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সৈয়দ নওশের আলী তাদের নানা।

স্কুল জীবনেই কমিউনিস্ট রাজনীতির দীক্ষা নিয়েছিলেন জুনো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় মাস্টার্স করলেও রাজনীতিকেই পেশা হিসেবে নেন।

পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনে যুক্ত হয়ে কারাবরণ করেন জুনো। তখন তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী। তার ভাই রণো তখন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি। পরে জুনো ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

ষাটের দশকে কমিউনিস্ট আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া জুনো ছিলেন চীনপন্থি শিবিরে। ১৯৭০ সালে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন গঠিত হলে তিনি এর সভাপতির দায়িত্ব নেন।

স্বাধীনতার পর জুনো লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি ইউনাইডেট পিপলস পার্টির (ইউপিপির) সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক হন। ১৯৭৯ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হলে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন তিনি।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন জুনো। পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র জুনো তখন বোমা তৈরির কাজ করছিলেন। প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভূইয়াদের সঙ্গে তিনি নরসিংদীর শিবপুরে প্রতিরোধ যুদ্ধেও ছিলেন।

জুনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি প্রগতিশীল গণমুখী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতেও ভূমিকা রেখেছেন। গণ-সংস্কৃতি ফ্রন্টের সভাপতি ছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ কিউবা সংহতি কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।