হাজী সেলিম ও তার স্ত্রীর দেখা পায়নি র‌্যাব

হাজী সেলিমের ছেলের হাতে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা ‘প্রহৃত হওয়ার’ জেরে পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটে এই সংসদ সদস্যের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার দেখা পায়নি র‌্যাব।

কামাল হোসেন তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2020, 12:36 PM
Updated : 26 Oct 2020, 01:07 PM

তবে এরইমধ্যে হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম এবং তার দেহরক্ষীকে আটক করার কথা জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুপুর থেকে অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে 'হেফাজতে' নেওয়া হয়েছে।

নয়তলা ভবনের চতুর্থ তলা থেকে তাদেরকে ‘হেফাজতে’ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

পরে ওই ভবন থেকে লাইসেন্সহীন একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি, একটি এয়ারগান, ৩৭টি ওয়াকিটকি, একটি হাতকড়া এবং বিদেশি মদ ও বিয়ার জব্দ করার কথা জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

সাংসদ হাজী সেলিম কোথায় জানতে চাইলে আশিক বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাজী সেলিম বাড়িতে নেই। অভিযানের আগেই তিনি তার স্ত্রীসহ ডাক্তারখানায় গেছেন বলে জানা গেছে।”

নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর সোমবার দুপুরে সোয়ারি ঘাট এলাকায় সাংসদ হাজী সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান চালায় র‌্যাব। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তবে কোন চিকিৎসকের কাছে গেছেন, তা জানাতে পারেননি র‌্যাব এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য হাজী সেলিমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও সাড়া দেননি তিনি। আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী বেলাল হোসেনের মোবাইলে ফোন করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।  

রোববার রাতে ধানমণ্ডি এলাকায় সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত হাজী সেলিমের গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়।

এ ঘটনায় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম, সাংসদের প্রোটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু, ইরফানের দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদ ও গাড়িচালক মিজানুর রহমানের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও তিনজনকে আসামি করে সোমবার সকালে ধানমণ্ডি থানায় একটি মামলা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে পথরোধ করে সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর, জখম ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন মামলার বাদী নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিফ আহমেদ খান।

মামলা হওয়ার পরপরই গাড়ির চালক মিজানুর রহমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে ধানমণ্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী জানিয়েছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে কলাবাগানের দিকে যাচ্ছিলেন। ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো একটি কালো রঙের ল্যান্ড রোভার গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৫৭৩৬) পেছন থেকে তার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়।

হাজী সেলিম (ফাইল ছবি)

ওয়াসিফ ও তার স্ত্রী ধাক্কা সামলে মোটরসাইকেল থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ওই গাড়ি থেকে জাহিদ, দিপু এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুই-তিনজন ‘অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ’ করতে করতে নেমে আসে এবং ‘মারধর’ শুরু করেন। তারা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ ও তার স্ত্রীকে ‘উঠিয়ে নেওয়ার এবং হত্যার’ হুমকি দেয় বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

ধানমণ্ডির ওসি ইকরাম আলী বলেন, “গাড়িটি ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের হলেও ঘটনার সময় তিনি গাড়িতে ছিলেন না। গাড়িতে তার ছেলে ইরফান সেলিম ছিলেন।”

ইরফান সেলিম নিজেও একজন জনপ্রতিনিধি; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তিনি।

আর ব্যবসায়ী হাজী সেলিম এবার তৃতীয় মেয়াদে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাজী সেলিম এরমধ্যে একবার বিদ্রোহী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

পুরান ঢাকার আলোচিত-সমালোচিত হাজী সেলিম বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই এলাকা থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সে সময় সাবেক ঢাকা-৮ আসনের বিএনপি প্রার্থী আবুল হাসনাতকে হারালেও ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে যান বিএনপি প্রার্থী নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে।

এরপর সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই আসনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বিএনপির নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে চমক দেখান হাজী সেলিম।

এরপর ২০১৮ সালে আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা-৭ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীকে হারান তিনি।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন মঈনুল হক চৌধুরী ও কাজী মোবারক হোসেন]